বিদেশিরা শেয়ার ধরছে বেশি, ছাড়ছে কম
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ক্রয়ে মনোযোগ দিয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে বিদেশিরা যে পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করেছেন, ক্রয় করেছে তার দ্বিগুণেরও বেশি।
ভোটের পর প্রথম মাস জানুয়ারিতেও বিদেশিদের শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে একই চিত্র দেখা যায়। মাসটিতে বিদেশিরা যে পরিমাণ অর্থের শেয়ার বিক্রি করে, ক্রয় করে তার থেকে প্রায় দুইশ কোটি টাকা বেশি।
অথচ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় টানা তিন মাস বিদেশিরা যে পরিমাণ টাকার শেয়ার ক্রয় করে, বিক্রি করে তার থেকে বেশি। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সমগ্র শেয়ারবাজারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় ধরনের রাজনৈতিক সংঘাত ছাড়াই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে যে দল ক্ষমতায় ছিল সেই দলই আবার ক্ষমতায় এসেছে। এতে সবাই ধরে নিচ্ছেন সব ধরনের বিনিয়োগে কিছুটা হলেও গতি আসবে। এ কারণেই বিদেশিরা যে পরিমাণ শেয়ার ছাড়ছেন (বিক্রি), ধরছেন (ক্রয়) তার থেকে বেশি।
তারা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশে যে পরিবেশ বিরাজ করছিল তাতে সবারই ধারণা ছিল বড় ধরনের রাজনৈতিক সংঘাত দেখা দিতে পারে। নির্বাচনের ১৫ দিন আগেও কেউ ধারণা করতে পারেননি এতটা শান্তিপূর্ণভাবে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় নির্বাচনের আগে শেয়ার বিক্রি করে সেভ জোনে (নিরাপদ স্থান) চলে যাওয়ার চেষ্টা চালায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। ফলে নির্বাচনের আগের কয়েক মাস বিদেশিদের শেয়ার ক্রয়ের থেকে বিক্রির পরিমাণ বেশি থাকে। তবে ভোটের পর অনিশ্চয়তা কেটে যাওয়ায় আবার শেয়ার ক্রয়ে ফিরেছেন বিদেশিরা।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি জুড়ে বিদেশিরা শেয়ারবাজার থেকে ৫৮৭ কোটি ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার ক্রয় করেছে। বিপরীতে বিক্রি করেছে ২৬৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকার। অর্থাৎ মাসটিতে বিক্রির থেকে বিদেশিদের ক্রয় বেশি হয়েছে ৩২৩ কোটি ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বা ২০১৯ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বিদেশিরা শেয়ারবাজার থেকে ৪৯৫ কোটি ১৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকার শেয়ার ক্রয় করে। বিপরীতে বিক্রি করে ৩১৯ কোটি ৯০ লাখ ৪৯ হাজার টাকার শেয়ার। অর্থাৎ মাসটিতে বিদেশিরা বিক্রির থেকে ১৭৫ কোটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার টাকার শেয়ার বেশি ক্রয় করে।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দুই মাসে বিদেশিরা যে পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করেছে ক্রয় করেছে তার থেকে ৪৯৮ কোটি ৪৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা বেশি শেয়ার।
অথচ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র ২০১৮ সালের শেষ তিন মাস টানা শেয়ার বিক্রির চাপ অব্যহত রাখে বিদেশিরা। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশিরা যে পরিমাণ টাকার শেয়ার ক্রয় করে বিক্রি করে তার থেকে ৩২৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা বেশি শেয়ার।
এর মধ্যে অক্টোবরে বিদেশিদের শেয়ার ক্রয় থেকে বিক্রি বেশি হয় ২০১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পরের মাস নভেম্বরে ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ডিসেম্বরে ১০১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা শেয়ার ক্রয় থেকে বেশি বিক্রি করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র ২০১৮ সালের শুধু শেষ তিন মাস নয় পুরো বছরের বেশিরভাগ সময় বিদেশিরা শেয়ার বিক্রির চাপ অব্যহত রাখে। বছরটিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ায় এপ্রিল থেকে।
এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত টানা পাঁচ মাস বিদেশিরা শেয়ার ক্রয় থেকে বিক্রি বেশি করেন। এরমধ্যে এপ্রিলে শেয়ার ক্রয় থেকে বিক্রি বেশি করে ২৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকার। পরের মাস মে-তে ২৮২ কোটি ৩৪ লাখ, জুনে ২০৬ কোটি ৭১ লাখ, জুলাইতে ৩২ কোটি ৭১ লাখ এবং আগস্টে পাঁচ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ক্রয় থেকে বিক্রি বেশি ছিল বিদেশিদের।
এমএএস/এএইচ/এমএস