কৃষি খাতেও কমেছে ঋণ বিতরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:১৮ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

উচ্চ সুদহার ও তারল্য সংকটসহ নানা কারণে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিতে ভাটা পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে কৃষি খাতের ঋণ বিতরণে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ব্যাংকগুলো কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ করেছে ১২ হাজার ১০ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬০১ কোটি টাকা কম। গত অর্থবছরে একই সময় কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ করেছিল ১২ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ও পল্লী ঋণবিষয়ক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, প্রতিবছর কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণে বাধ্য করা হচ্ছে। এরপরও বেশিরভাগ কৃষক ঋণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যার প্রধান কারণ কৃষি ঋণে ব্যাংকগুলোর অনীহা। এছাড়া অন্যান্য খাতের তুলনায় কৃষি ঋণে সুদহার কম হওয়ায় ব্যাংকগুলো এ খাতে অনাগ্রহ দেখায়। অন্যদিকে ঋণ নিতে নানা হয়রানি ও মামলার ভয়ে কৃষকরা ব্যাংক বিমুখ হয়ে পড়ছেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিতরণ হওয়া ঋণ চলতি অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার ৫৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বিতরণের হার ছিল ৬২ দশমিক ২৭ শতাংশ।

জানা গেছে, চলতি (২০১৮-১৯) অর্থবছরে ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরমধ্যে (জুলাই-জানুয়ারি) প্রথম সাত মাসে বিতরণ হয়েছে ১২ হাজার ১০১ কোটি টাকা, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৫৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে চেয়ে ৬০১ কোটি টাকা কম। গত অর্থবছরে একই সময় ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছিল ১২ হাজার ৭০২ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুয়াযী, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি শেষে কৃষি খাতে মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর ৩০ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর মোট ৯ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, আলোচিত সময়ে দেশি বিদেশি খাতের তিনটি ব্যাংক অর্থবছরে কৃষি খাতে কোনো ঋণ বিতরণ করেনি। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও ওরি ব্যাংক। এছাড়া মধুমতি ব্যাংকও কোনো ঋণ বিতরণ করেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের ২ দশমিক ৫ শতাংশ পল্লী অঞ্চলে বিতরণ করতে হবে। পল্লী অঞ্চলে অর্থ সরবারহের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা ও খাদ্য নিরাপত্তা সৃষ্টিতে সরকারের লক্ষ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক এ নির্দেশনা জারি করে। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যবহার চালু করে।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে অনার্জিত লক্ষ্যমাত্রার সমপরিমাণ অথবা বিকল্পভাবে অনার্জিত লক্ষ্যমাত্রার ৩ শতাংশ হারে হিসাবায়নকৃত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হবে।

গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যাংকসমূহ মোট ২১ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করেছে, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১০৫ শতাংশ। বিগত অর্থবছরে মোট ৩৯ লাখ ৬২ হাজার ৫০৮ জন কৃষিঋণ পেয়েছেন, যার মধ্যে ব্যাংকসমূহ নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও এমএফআই লিংকেজের মাধ্যমে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১৩৭ জন নারী ছয় হাজার ৩০৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকার কৃষিঋণ পেয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু সর্বশেষ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির হয়েছে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। যা ঘোষিত মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম।

এসআই/এএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।