রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারে এখন পর্যন্ত খরচ তিন কোটি
রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিরিয়ে আনতে মামলাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে এ পর্যন্ত তিন কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান।
রোববার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ চুরির মামলার বিষয়ে প্রেস বিফ্রিংয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ তথ্য জানান। এ সময় আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি, বিএফআইইউর পরামর্শক দেবপ্রসাধ দেবনাথ, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএফআইইউর প্রধান বলেন, মামলার বিষয়ে একটি টিম কাজ করছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ল ফার্মের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। তাদের ঘণ্টা হিসাবে অর্থ পরিশোধ করা হবে। তবে ঘণ্টায় কত টাকা পরিশোধ করতে হবে তা জানাননি তিনি।
পরে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত রিজার্ভ চুরি মামলা করতে গিয়ে তিন কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছে।
আরও পড়ুন >> তিন বছরে রিজার্ভ চুরির মামলা নিষ্পত্তি
রিজার্ভ উদ্ধারে চুরি হওয়া অর্থের চেয়ে বেশি খরচ হবে কি না জানতে চাইলে রাজি হাসান বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে মামলা করা হয়েছে। এখানে খরচ মুখ্য বিষয় নয়। আমাদের লক্ষ্য চুরি হওয়া পুরো অর্থ ফেরত আনা।
আইনজীবী আজমালুল হোসেন জানান, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে দায়ের করা মামলা তিন বছরের মধ্যে সমাধান হবে। তবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এ সময় কমতে বা বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইর্য়কের (ফেড) সঙ্গে মামলার বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। তারা মামলার জন্য বিভিন্ন নথি, তথ্য সরবরাহসহ সাক্ষী দেবে। ১০৩ পৃষ্ঠার মামলায় ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ ৭টি প্রতিষ্ঠানসহ ২৫ জন অজ্ঞাতনামা লোককে বিবাদী করা হয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশ সময় গত শুক্রবার ভোরে রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিরিয়ে আনা, ক্ষতিপূরণের দাবিতে দোষীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা করে বাংলাদেশ।
জানা যায়, হ্যাকাররা প্রায় ১০০ কোটি ডলার চুরি করার ষড়যন্ত্র করেছিল। তবে তারা ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করতে পারে। এর মধ্যে দুই কোটি ডলার শ্রীলঙ্কার একটি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। তবে বানান ভুলের কারণে শ্রীলঙ্কার অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা অর্থ ফেরত আসে। ২০১৬ সালের আগস্টে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক চুরির অর্থ স্থানান্তর বন্ধে ব্যর্থতার কারণে আরসিবিসি ব্যাংককে রেকর্ড পরিমাণ ১৯ মিলিয়ন ডলার বা এক কোটি ৯০ লাখ ডলার জরিমানা করে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অর্থ চুরির ঘটনা ঘটলেও তা প্রকাশ পায় মার্চে। এ ঘটনায় তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমানকে পদত্যাগ করতে হয়। দুই ডেপুটি গভর্নরকেও সরিয়ে দেয় সরকার। ঘটনা তদন্তে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে কমিটি করে সরকার। বারবার আশ্বাস দিলেও সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করেননি সদ্যবিদায়ী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ছিল বৃহস্পতিবার। পরের দুইদিন সরকারি ছুটি হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে অর্থ বের করতে সেদিন রাতকেই বেছে নেয়া হয়েছিল। ওই রাতেই ১৯৩ কোটি ডলার বের করার উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে সব আদেশ কার্যকর না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত চুরি হয় ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার।
অর্থ স্থানান্তর হয়ে যাওয়ার পর ১১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে ফোন করে অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে সহায়তা চান। ১৪ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনে যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধিদল। এরপর দফায় দফায় সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, গভর্নরসহ আরও অনেকে অর্থ উদ্ধার নিয়ে ফিলিপাইন, সুইফট কর্তৃপক্ষ ও ফেডের সঙ্গে সভা করে। ঘটনার তিন বছরের মাথায় মামলাটি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এসআই/বিএ/জেআইএম