বাণিজ্য মেলায় ‘দুখী-সুখী’ আঁকিয়েদেরও মিলনমেলা
মাথায় টুপি, তার ওপর জ্যাকেট। ভর দুপুরে বাম হাতে রাখা মোবাইলের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ডান হাতে পেন্সিল স্কেচ করছিলেন এমএ আজিজ। শুধু মোবাইলে দেওয়া ছবি নয়, কেউ গেলে সামনা-সামনি তার ছবিও এঁকে দিচ্ছেন তিনি।
আব্দুল আজিজের মতো দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ১৫ থেকে ২০ জন শিল্পী এভাবে পাশাপাশি বসে ছবি আঁকছিলেন। যাদের বড় অংশই ফ্রিল্যান্স আঁকিয়ে। রাজধানীর শেরে-ই-বাংলা নগরে চলমান ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার প্রধান ফটকের সামনের চত্বরে বসে এভাবে দর্শনার্থীদের ছবি এঁকে দেন তারা।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফ্রিল্যান্স ছবি আঁকাকে পেশা হিসেবে নেওয়ায় অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা তারা কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। কাউকে ছবি আঁকার পাশাপাশি অন্য কোনো কাজ করতে হয়, আবার কাউকে নির্ভর করতে হয় পরিবারের কর্মক্ষম অন্যজনের ওপর।
মেলা শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই তারা সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এখানে ছবি আঁকেন তারা। দর্শনার্থীদের স্কেচ এঁকে দেওয়ার বিনিময়ে নেন আকার ভেদে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। তারা বলছেন, মেলার শুরুতে এখনও তাদের অনেকটা ফাঁকাই বসে থাকতে হয়। তবে আস্তে আস্তে কাজের চাপ বাড়বে।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মতো যেসব জায়গায় জনসমাগম হয়, সেখানেই তারা ছুটে যান ছবি আঁকার জন্য। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে পাস করা আব্দুল আজিজও তাই করেন। ২০০৪ সালে পড়াশোনা শেষ করার পর ওই বছরই একুশে বই মেলায় ফ্রিল্যান্স ছবি আঁকা শুরু করেন তিনি। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত ফ্রিল্যান্স হিসেবেই ছবি আঁকছেন।
ফ্রিল্যান্স ছবি আঁকাকে ভালোভাবেই দেখেন নরসিংদী সদরের রাজু সাহা। তিনিও ১৪ জানুয়ারি দুপুরে সেখানে বসে ছবি আঁকছিলেন। ছবি আঁকার পাশাপাশি স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি ভাস্কর হিসেবে চুক্তিভিত্তিক কাজও করেন। যদিও তিনি ভাস্কর্য কিংবা ছবি আঁকার ওপর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেননি।
রাজধানীর একটি হোটেলে ভাড়া থেকে প্রতিদিন ছবি আঁকতে মেলায় আসেন তিনি। ভালো লাগার জায়গা থেকে ছোটবেলায় আঁকতে আঁকতে শিল্পী হওয়া রাজু বলেন, ‘এসব করে আমি তো ভালোভাবেই চলছি। দোতলা একটি বাড়িও করেছি এলাকায়।’
তবে ছবি আঁকাআঁকি করতে অন্যদের পাশাপাশি নিজের সন্তানকেও নিরুৎসাহিত করেন মুন্সিগঞ্জ সদরের মো. রতন মৃধা! তিনি পড়াশোনা করেছেন নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে। ২০১২ সালে পড়াশোনা শেষ করার পর ঢাকামুখী হবেন না বিধায় চাকরিতে প্রবেশ করেননি। এখন দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এই ফ্রিল্যান্স ছবি আঁকিয়েকে।
রতন মৃধা জাগো নিউজকে বলেন, ‘পড়াশোনা শেষ করার পর ঢাকায় চাকরি হয়েছিল। কিন্তু ঢাকামুখী হতে ইচ্ছা করে না। তাই চাকরি করিনি। এলাকায় চাকরি হলে ওই দিকে থাকতাম। কিন্তু সেটা তো আর হলো না।’
বাণিজ্য মেলায় ছবি এঁকে উপার্জনের জন্য এক আত্মীয়ের বাসায় ওঠা এই শিল্পী বলেন, ‘যারা নামে আছে, তারাই ভালো আছে। বাকিরা আর্থিক সংকটে। অনেকেই না বুঝে এই পেশায় আসে। এই দেশে এ পেশায় আসা উচিত না! এ অবস্থা চলতে থাকলে একদিন দেশে এই শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে।’
তিনি বাণিজ্য মেলা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দেন, অনুষ্ঠানিক অনুমতি না দিলেও প্রতিবন্ধকতা না তৈরি করায়।
পিডি/এসএইচএস/এমএস