মল্লিকাদের আশ্রয় রংপুরের শতরঞ্জী
স্বামী ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে বিষয়-আশয় যা ছিল, সব শেষ করেও বাঁচাতে পারেননি রংপুর সদরের মল্লিকা বেগম। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে যখন স্বামীর মৃত্যু হয় তখন একমাত্র সন্তানকে নিয়ে অথৈ বিপদে পড়েন তিনি। সন্তান ও নিজের ভরণপোষণের জন্য দিগবিদিক ছুটতে থাকা মল্লিকা আশ্রয় নেন শতরঞ্জী পল্লী লিমিটেডে। স্বামী হারানোর পর সন্তানকে নিয়ে তার বাঁচার অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায় এ প্রতিষ্ঠানটি।
শুধু মল্লিকা বেগম নন, সর্বশান্ত হয়ে বা জীবন চলার পথে মুখ থুবড়ে পড়া এরকম আরও প্রায় দেড়শ নারীর আশ্রয় শতরঞ্জী পল্লী। ‘আমরা নারী আমরা পারি’ স্লোগানের এ প্রতিষ্ঠানটির অসহায় নারীদের আশ্রয় দিয়ে থাকে।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় এসএমই ফাউন্ডেশনের প্যাভিলিয়নের শতরঞ্জী লিমিটেডের স্টলে মল্লিকা বেগমের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। মল্লিকা বেগম জানান, তার স্বামী যখন মারা যান, তখন তিনি কোনো হাতের কাজ জানতেন না। সংসার চালানোর মতো কোনো টাকা-পায়সাও ছিল না। শতরঞ্জী পল্লী লিমিটেডে কাজ শুরুর পর ধীরে ধীরে কাজ শেখেন। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে সুপারভাইজার হিসেবে ৭ হাজার টাকা বেতনে কাজ করছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর এ পেশাই তাকে টিকিয়ে রেখেছে।
শতরঞ্জী স্টলে দেখা যায়, স্টলটিতে নানা ধরনের শতরঞ্জী, টেবিলমেট, রূপসেট, জায়নামাজ ও পাপস রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত নারীরা নিজ হাতে এসব জিনিসপত্র তৈরি করেন। তাদের তৈরি এসব পণ্য টেকসইও হয় অনেক বেশি। মল্লিকা ও স্টলের অন্য কর্মচারীরা জানান, ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত এসব পণ্য নিশ্চিতভাবে ব্যবহার করতে পারেন ভোক্তারা।
এসব পণ্যের দামও অনেকটা নাগালের মধ্যে। শতরঞ্জী পাওয়া যাচ্ছে আড়াইশ টাকা থেকে ৪ হাজার ৩২০ টাকা, পাপস ২৫০ টাকা, টেবিলমেট ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, রূপমেট আড়াইশ টাকা ও জায়নামাজ পাওয়া যাচ্ছে ৮০০ টাকায়।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকও মনিরা বেগম নামের একজন নারী। মল্লিকা ও অন্য কর্মচারীরা আরও জানান, শতরঞ্জী পল্লী লিমিটেডের উদ্যোক্তাও মনিরা বেগম। রংপুরের ঐতিহ্যবাহী এসব পণ্য ধরে রাখতে মনিরা বেগমের এ প্রতিষ্ঠানটি ২০০২ সালে যাত্রা করে। ক্ষুদ্র শিল্পের এসব পণ্যের গুণগত মানের কারণে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে এখন জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জার্মানিতে রফতানি হচ্ছে। মেলা ছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়।
পিডি/আরএস/জেআইএম