নির্বাচনের আগে লাইসেন্স পাচ্ছে ৩ ব্যাংক, সিদ্ধান্ত আজ

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৪৫ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

অর্থনীতিবিদদের সমালোচনা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আপত্তি সত্ত্বেও রাজনৈতিক বিবেচনায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারের শেষ মুহূর্তে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে নতুন আরও তিন ব্যাংক। নির্বাচনের আগে আজই লাইসেন্স পাওয়ার শেষ সুযোগ ব্যাংক তিনটির।

মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভার অন্যতম এজেন্ডা হলো নতুন তিন ব্যাংকের অনুমোদন। ব্যাংক তিনটি হলো- বেঙ্গল ব্যাংক, পিপলস ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংক।

আরও পড়ুন >> নতুন ৯ ব্যাংকের অবস্থা নাজুক

এর আগে অক্টোবরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ বোর্ড সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পায় পুলিশ সদস্যদের মালিকানায় ‘কমিউনিটি ব্যাংক অব বাংলাদেশ’। ওই সভায় এজেন্ডাভুক্ত তিন ব্যাংকের কিছু কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় অনুমোদনের জন্য শর্ত জুড়ে দেয়া হয়।

শর্তগুলো পূরণ হলে আজকের বোর্ড সভায় ব্যাংক তিনটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আজ বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হবে। বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে নতুন তিনটি ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে কিনা?

এর আগে শর্তসাপেক্ষে ব্যাংক তিনটির অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তাদের প্রস্তাবে ও নথিপত্রে কিছু ঘাটতি ও ক্রটি থাকায় এবং সেগুলো সংশোধন করে দিলে পর্ষদ অনুমোদন দেবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরও বলেন, বাংলা ব্যাংক বা বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক তিনজনের বিষয়ে উচ্চ আদালতে কর সংক্রান্ত মামলা চলছে। সেগুলো নিষ্পত্তি করে আমাদের জানালে পর্ষদ সেটির অনুমোদন দেবে।

বাংলা ব্যাংকের প্রধান উদ্যোক্তা হলেন বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন। দেশে তাদের প্লাস্টিক শিল্পসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের ভাই।

দ্য সিটিজেন ব্যাংকের মালিক হলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা জাহানারা হক। সিটিজেন ব্যাংকের প্রস্তাবে কিছু ঘাটতি রয়েছে। সেগুলা ঠিকঠাক করে উপস্থাপন করতে নির্দেশনা দেয়া হয় আগের বোর্ড সভায়।

পিপলস ব্যাংকের উদ্যোক্ত চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা এম এ কাশেম।

কেন্দীয় ব্যাংক বলছে, প্রবাসী কাশেমের বিদেশে কী পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেটি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠালে তা পর্ষদে উপস্থাপন করা হবে। পর্ষদ সেটি বিবেচনা করে ব্যাংক স্থাপনের আগ্রহপত্র দেবে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। পর্ষদের অন্য সদস্যরা হলেন— জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. রুশিদান ইসলাম রহমান, ইসলাম আফতাব কামরুল অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের এ কে এম আফতাব উল ইসলাম এফসিএ এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ।

গত ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বনির্ধারিত বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও একজন পর্ষদ সদস্য দেশের বাইরে থাকায় তা স্থগিত হয়। ওই সভায়ও তিনটি ব্যাংকের অনুমোদনের বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত ছিল।

এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে নয়টি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়। সেগুলোর বেশির ভাগই খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে।

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন সামনে রেখে উদ্যোক্তারা সরকারের ওপর এ বিষয়ে এক ধরেনর চাপ তৈরি করেন। কারণ নির্বাচনের আগে অনুমোদন না পেলে পরবর্তীতে হয়তো বিষয়টি ফাইলবন্দি হয়ে যাবে। তাই উদ্যোক্তাদের লোবিংয়ে ও সরকারের চাপে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।

এর আগে ব্যাংকগুলোকে লাইসেন্স দেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেও কয়েকবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি লেখেন। অর্থমন্ত্রী সর্বশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দেন।

এসআই/এমএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।