শতাধিক ঋণখেলাপি প্রার্থী চিহ্নিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলকারীদের মধ্যে শতাধিক ঋণখেলাপি প্রার্থী চিহ্নিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তথ্য যাচাই বাছাই শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) নির্বাচন কমিশনে ঋণখেলাপি প্রার্থীদের তালিকা পাঠিয়েছে।
নির্বাচনের প্রার্থীরা ঋণখেলাপি কি না -তা যাচাইয়ে একটি বিশেষ সেল গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২৯ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) থেকে প্রার্থীদের ঋণ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই শুরু হয়ে চলে শনিবার দিনগত রাত পর্যন্ত।
রোববার বিষয়টি নিশ্চিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আইন অনুযায়ী নির্বাচনে ঋণখেলাপিরা যেন প্রার্থী হতে না পারেন -এ জন্য একটি বিশেষ সেল গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তথ্য যাচাই বাছাই শেষে শতাধিক ঋণখেলাপি প্রার্থী চিহ্নিত করা হয়। তাদের তালিকা ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এখন ইসি খেলাপিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে ঋণখেলাপিদের ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক নানা উদ্যোগ নিলেও আগেই ঋণখেলাপিদের ছাড় দিয়ে নিয়মিত করে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে বেশিরভাগ প্রভাবশালী প্রার্থী নানা কৌশলে খেলাপি ঋণ নবায়ন করে নিয়েছেন। এমনি একজন ঋণ খেলাপির প্রার্থী ছিলেন চাঁদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ড. শামসুল হক ভূঁইয়া।
বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংকে তার ৬০ কোটি টাকার ওপরে খেলাপি ঋণ রয়েছে। মনোনয়ন রক্ষায় আদালতের শরণাপন্ন হন শামসুল হক। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৭ নভেম্বর শুনানি শেষে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে তার প্রার্থিতা আটকে যায়। পরে কোনো উপায় না পেয়ে নামমাত্র ডাউনপেমেন্ট (ন্যূনতম পরিমাণ নগদ অর্থ পরিশোধ) দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিল করেন তিনি।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এহসান খসরু জাগো নিউজকে বলেন, ড. শামসুল হক ভূঁইয়া ঋণ খেলাপি ছিলেন। তবে খেলাপির বিপরীতে প্রয়োজনীয় ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ঋণ নবায়ন করেছেন। এখন সে আর ঋণ খেলাপি নয়। এ বিষয়ে ব্যাংক তার বিরুদ্ধে কোনো আপত্তি করেনি।
তবে নিয়ম অনুযায়ী ডাউনপেমেন্ট করেছি কি না -জানতে চাইলে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় দুইশতাধিক ঋণখেলাপি ও কিস্তি খেলাপিদের আবেদন গ্রহণ করে তা অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্বাচনে যেন অযোগ্য না হয় সেই জন্যই এ আবেদন করেন খেলাপিরা। তাদের মধ্যে কোনো কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে অতি সামান্য ডাউনপেমেন্ট নিয়ে পুনঃতফসিল সুবিধা অনুমোদন দিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাটি।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুসারে সর্বোচ্চ ৩ বার যেকোনো গ্রাহক পুনঃতফসিল সুবিধা নিতে পারেন। এ জন্য নীতিমালা রয়েছে। ন্যূনতম পরিমাণ অর্থ নগদ (ডাউনপেমেন্ট) পরিশোধ করতে হয়।
নীতিমালা অনুসারে প্রথমবার পুনঃতফসিলের জন্য বকেয়া কিস্তির ১৫ শতাংশ বা মোট পাওনা ১০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম সেই পরিমাণ নগদ অর্থ জমা দিতে হয়। দ্বিতীয়বার করতে হলে বকেয়া কিস্তির ৩০ শতাংশ বা মোট পাওনার ২০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম এবং তৃতীয়বার পুনঃতফসিলের জন্য বকেয়া কিস্তির ৫০ শতাংশ বা মোট পাওনার ৩০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম সেই পরিমাণ নগদ অর্থ জমা দিতে হয়।
গত বুধবার (২৮ নভেম্বর) ছিল নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ব্যাংকগুলোকে দেয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়সীমা পার হওয়ার পর ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক বা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিজ উদ্যোগে রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে প্রার্থীর তালিকা সংগ্রহ করে তথ্য যাচাই করে। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিন ২ ডিসেম্বর ঋণখেলাপি-সংক্রান্ত তথ্যসহ শাখা ব্যবস্থাপকদের সংশ্নিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের দফতরে বাধ্যতামূলকভাবে উপস্থিত থাকতে হয়।
এসআই/আরএস