কর অব্যাহতি কমানো দরকার : অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:১০ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০১৮

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘কর অব্যাহতি কমানো দরকার। অথবা কোন বিষয়ে কর ছাড় হবে তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা দরকার।’

একই সঙ্গে এনবিআরের সংস্কার আনতে তিনি আরও দুটি পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে-ট্যারিফ মূল্যকে বিদায় করা অথবা দারুণভাবে কমিয়ে আনা এবং সিদ্ধান্ত ও নীতি বাস্তবায়নে যে দুর্বলতা আছে সেটি কমানো।

উল্লেখ্য, দেশে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী একটি পণ্যে দুই ধরনের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। একটি হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের জন্য আর অন্যাটি হচ্ছে শুল্ক আদায়ের জন্য। শুল্ক আদায়ের জন্য নির্ধারিত মূল্যই হচ্ছে ট্যারিফ মূল্য।

মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে সাংবাদিক আবু কাওসারের লেখা ‘রাজস্ব ভাবনা যেতে হবে বহুদূর’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে তিনি এ কথা বলেন। বইটিতে রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তর তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কয়েকজন সাবেক চেয়ারম্যান ও রাজস্ব সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সাক্ষাৎকারও বইটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এনবিআর শিক্ষার্থীদের কাজে লাগাতে পারে। প্রতিবছর কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় তাদের দিয়ে সার্ভে করাতে পারে। তারা ফিরে এসে যে রিপোর্ট দিবে, যাদের করের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করতে বলবে এনবিআর তাদের করের আওতায় নিয়ে আসবে।’

সাংবাদিক ও লেখক কাওসারকে অভিনন্দন জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বইটি প্রকাশের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে তিনি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করলেন। কারণ বাংলা ভাষায় রাজস্ব নিয়ে এমন বই আর নেই। বইটিতে যেসব বিষয়ে পরামর্শ এসেছে আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে তা পর্যালোচনা করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সাংবাদিক আবু কাওসার নিজের প্রকাশিত বই সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরেন। জানান, অর্থনীতির মতো নিরস শাস্ত্র নিয়ে লিখতে গিয়ে বহু কষ্ট সইতে হয়েছে।

ফাঁকির বিষয়ে বেশ তথ্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনও বছরে কর ফাঁকির পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকা। দেশে করযোগ্য অনেক রাজস্ব আছে, কিন্তু আদায় করা যাচ্ছে না।’

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও করের একক হার হওয়া উচিত। পরে যদি কারও ওপর থেকে কর হার কমাতে হয় বা কর অবকাশ দিতে হয় তা করতে হবে। একেক বছর একেক ধরনের কর হার হওয়া উচিত নয়। কারণ এর উপরও বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নির্ভর করে। কর আদায়ে কঠোর হলেই বেশি কর আদায় সম্ভব নয়। করদাতাদের সহযোগিতা ছাড়া কর আদায় বাড়ে না।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক সমকালের প্রকাশক এ কে আজাদ বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব নয়। এনবিআরকে আলাদা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান করে দিতে হবে। আর এনবিআরের কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা না থাকলে রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব হবে না।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে রাজস্ব বোর্ডই হতে হবে, কোনো সরকারি অফিস নয়। এখানের চেয়ারম্যান হতে হবে এনবিআরের কর্মকর্তা থেকেই। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের নামে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দ্বারা এটি পরিচালিত হতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, মান্ধাতা আমলের মতো ভবন ভাড়া নিয়ে কর আদায় করা যাবে না, অঞ্চলভিত্তিক নিজস্ব ভবন গড়ে তুলতে হবে।

এনবিআর সদস্য (আয়কর) জিয়া উদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফিসহ এনবিআরের একাধিক সাবেক কর্মকর্তা ও রাজস্ব বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য রাখেন।

এমইউএইচ/এএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।