বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধে কৌশলী পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ
বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধে দেশের স্থানীয় উদ্যোক্তারা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেদিকে নজর রেখে সরকারকে কৌশলী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে এ যুদ্ধে সুবিধা আদায়ে দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি অবকাঠামো ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন করা জরুরি।
শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বারে “বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ এবং বাংলাদেশে- এর প্রভাব” শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও সরকারের নীতি-নির্ধারকরা। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
সেমিনারে বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু, ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য, ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশনের সিনিয়র ইকোনোমিস্ট ড. এম মাশরুর রিয়াজ, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান, ঢাকা চেম্বারের পরিচালক ও এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের ব্যবস্থপনা পরিচালক হুমায়ুন রশিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু বলেন, সম্প্রতি শুরু হওয়া বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে, তবে এটি বেশিদিন স্থায়ী হবে না।
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক চীনের রফতানিকৃত যেসব পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করেছে, তার পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একটি জরিপে তথ্য তুলে ধরে বাণিজ্য সচিব বলেন, চীনের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ৯৪ শতাংশ বিনিয়োগকে পুনরায় আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী নয়। তারা এশিয়ার বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া প্রভৃতি দেশকে প্রধান্য দেবে।
চীনের সানসেট ইন্ডাস্ট্রিকে স্থানান্তরের লক্ষ্যে বাংলাদেশকে উপযোগী গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপনের জন্য বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন, মানবসম্পদের দক্ষতা বাড়ানো এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ওপর গুরুতারোপের বেসরকারি খাতের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব অনুযায়ী, বাণিজ্যযুদ্ধের আর্থিক প্রভাবের পরিমাণ প্রায় ৪৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এটি বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ০.৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, বাংলাদেশ, লাওস এবং শ্রীলঙ্কা থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর চীন শুল্কারোপ করেছে। চীনের সানসেট ইন্ডাস্ট্রিকে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উৎকৃষ্ট স্থান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আহমেদ। তিনি বলেন, বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক জিডিপির ০.৮১ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বৈশ্বিক মন্দা সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং সুতার দাম বৈশ্বিক বাজারে ১০ শতাংশ কমে যাওয়ায় আমাদের উদ্যোক্তাবৃন্দ কম খরচে তৈরি পোশাক উৎপাদনে সুযোগ পাবেন।
ডিসিসিআইর পরিচালক হুমায়ুন রশিদ বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রতিযোগিতার ফলে তেল ও ডলারের মূল্য বাড়ার সম্ভাবনা পাশাপাশি ব্যাংকঋণের উচ্চহারের ফলে ফলে আমাদের পণ্যের উৎপাদান খরচ বাড়বে এবং এর ফলে আমাদের ব্যবসায়ীদের বৈশ্বিক বাজারে সক্ষমতা হারাবে।
মুক্ত আলোচনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শরীফা খান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ড. মো. আবু ইউসুফ, ডিসিসিআই আহ্বায়ক এনামুল হক পাটোয়ারী, রাশেদুল করিম মুন্না, ব্যারিস্টার মো. সিয়াম আল-দ্বীন মালিক, প্রাক্তন ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আলহাজ আব্দুস সালাম এবং প্রাক্তন পরিচালক এ কে ডি খায়ের মোহাম্মদ খান প্রমুখ।
এসআই/বিএ/আরআইপি