‘অসহায়ত্ব প্রকাশ ছাড়া আমাদের উপায় নেই’
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন বলেছেন, ‘প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা যোগসাজশে কোনো কোম্পানির কাট অফ প্রাইজ অতিরিক্ত নির্ধারণ করলে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার অসহায়ত্ব প্রকাশ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।’
এ সময় শেয়ারবাজারের ওপর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলেও জানান বিএসইসির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘নিয়ম বহির্ভূত লেনদেনের মাধ্যমে বাজারকে অস্থিতিশীল করার কি ধরনের অপচেষ্টা আছে, আমরা সেগুলোর দিকে যথাযথভাবে নজর রাখছি। বাজারে যাতে কোনো রকম অস্থিতিশীল অবস্থা না হয় আমরা তার ব্যবস্থা করব।’
সোমবার ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) উদ্যোগে বিএসইসির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জন্য আয়োজিত এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান।
সম্প্রতি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে যে কয়টি কোম্পানি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করেছে, যোগ্য বিনিয়োগকারীদের যোগসাজশের কারণে তার প্রায় সবকটির কাট অফ প্রাইজ যোগ্যতার থেকে বেশি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে খায়রুল হোসেন বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের অনেকদিন অভিযোগ ছিল আমরা ভালো প্রাইজ (দাম) পায় না। বুক বিল্ডিং সিস্টেম আমরা করেছি। এখন কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল, শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) না দেখে যোগসাজশে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা (যোগ্য বিনিয়োগকারী) যদি প্রাইস কোর্ড (দর প্রস্তাব) করে তাহলে তো অসহায়ত্ব প্রকাশ করা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই।’
তিনি বলেন, ‘বুক বিল্ডিংয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। আগে একজন যোগ্য বিনিয়োগকারী বুক বিল্ডিংয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের ১০ শতাংশ শেয়ার কেনার আবেদন করতে পারতো। এতে ১০ জন মিলে একটি সিন্ডিকেট করে দামে নির্ধারণ করতে পারতো। এখন আমরা দুই শতাংশ করেছি। তার মানে একটি কোম্পানির কাট অফ প্রাইজ নির্ধারণ করতে অন্তত ৫০ জন বিনিয়োগকারীকে কোর্ড করতে হবে।
সম্প্রতি পুঁজিবাজারে আসা কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে কোম্পানি ধরে ধরে বিভিন্ন সাংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়েছে। তবে কোম্পানিগুলোর এ সব অনিয়মের বিষয়ে বিএসইসি কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে বিভিন্ন পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেছেন, আইপিও অনুমোদনের পর কোনো কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম আশ্রয় নেয়া সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেলে শেষ মুহূর্তে এসেও আইপিও চাঁদ গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আইপিওর পূর্বশর্ত পূরণ হলে আমরা একটি কোম্পানির আইপিও দিয়ে দেই। তারপর দেখা যায় বাস্তবে অনেক কিছু মিল হচ্ছে না। এখন আইপিও সাবস্ক্রিপশন শুরুর আগেই সব তথ্য ওয়েবসাইটে দিয়ে দেয়া হয়। যদি কেউ দেখাতে পারে এ কোম্পানিতে এগুলো সমস্যা হচ্ছে, বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাহলে শেষ মুহূর্তে বললেও আমরা সাবস্ক্রিপশন বন্ধ করে দেব।’
একটি কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে বিএসইসির পক্ষে সব বিষয় দেখা সম্ভব না উল্লেখ করে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘সবকিছু যদি আমরা ভেরিফাইড করতে যায়, তাহলে একটি আইপিও আসতে সময় লাগবে ৩ বছর।’
পুঁজিবাজারে অনেক সংস্কার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন বিভিন্ন ফিক্সড ইনকাম, সিকিউরিটিজ থেকে শুরু করে বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন, ইসলামীক ও ডেরিভেটিভ পণ্য আনার জন্য কাজ করছি। ২০১৯ সালের মধ্যে আপনারা ব্যাপক পরিবর্তন দেখতে পাবেন।’
বিএসইসির অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালা, হেলাল উদ্দিন নিজামী, খোন্দকার কামালুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ, পরিচালক রেজাউল করিম, সিএমজেএফের সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল প্রমুখ।
এমএএস/এনডিএস/এমএস