আকাশ থেকে মাটিতে শিম

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:০৭ পিএম, ০২ নভেম্বর ২০১৮

তিন মাসের বেশি সময় ধরে রাজধানীর বাজারগুলোতে ১শ’ টাকার ওপরে কেজিতে বিক্রি হওয়া শিমের দাম কমে এখন ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে সবজিটি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বাজারের সব থেকে দামি সবজির তালিকায় থাকা শিম এখন সব থেকে সস্তার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।

শিমের পাশাপাশি শীতের আগাম সবজি ফুলকপি, পাতাকপি, মুলাসহ প্রায় সব সবজির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে। শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, মালিবাগ হাজীপাড়া, খিলগাঁও, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচার বাজার ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে শীতের সবজি ভরপুর থাকায় দাম কমছে।

কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা এক পাল্লা (৫ কেজি) শিম বিক্রি করছেন ১০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতিকেজি শিমের দাম পড়ছে ২০ টাকা। তবে যারা খুচরা বাজারে বিক্রির জন্য বেশি করে (৫-৭ পাল্লা) কিনছেন তাদের কাছ থেকে আরও কম দাম নেয়া হচ্ছে।

মালিবাগ হাজীপাড়া বাজারে ব্যবসায়ীরা প্রতিকেজি শিম ৩০ টাকায় বিক্রি করছেন। রামপুরা বাজারে ৩০-৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে শান্তিনগর বাজারে এক প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়।

শিমের দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. হাতেম বলেন, এখন শীতের সব সবজিই বাজারে ভরপুর। ফলে শুধু শিম নয় সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। সামনে হরতাল-অবরোধ বা ঝড়-বৃষ্টি না হলে দাম আরও কমবে। এখন যে শিমের পাল্লা ১০০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে সেই শিমই কিছুদিন পর ৫০ টাকা পাল্লা বিক্রি হবে।

হাজীবাড়া বৌ-বাজারের ব্যবসায়ী মো. ইদ্রিস বলেন, এক সপ্তাহ আগেই এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) শিম ৩০ টাকা বিক্রি করেছি। আর এখন এক কেজি শিম ৩০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে যারা শিমের দাম শুনে না কিনেই ফিরে গেছেন এখন তারাই কেজি কেজি শিম কিনছেন।

তিনি আরও বলেন, আড়ৎ থেকে কম দামে আনতে পারায় আমরাও এখন কম দামে শিম বিক্রি করছি। শুধু শিম নয়, মুলা, কপি, লাউ, টমেটোসহ সব ধরনের সবজির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কমেছে।

এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে দামি সবজির তালিকায় থাকা টমেটোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে গাজরের দাম। বাজারভেদে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। আর গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা কেজি।

দাম কমার তালিকায় রয়েছে- শীতের অন্যতম আগাম সবজি ফুলকপি ও পাতাকপি। বাজার ও মানভেদে ফুলকপির পিচ বিক্রি হচ্ছে ২০-৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০-৫০ টাকা। আর গত সপ্তাহে ৫০ টাকা পিচ বিক্রি হওয়া পাতাকপির দাম কমে ৩০ টাকায় নেমে এসেছে।

বিভিন্ন বাজারে ৩০-৪০ টাকা কেজির মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে পটল, ঢেঁড়স, বেগুন, করলা, চিচিংগা, ঝিঙা ও ধুন্দল। এক সপ্তাহ আগেও কিছু কিছু বাজারে এসব সবজির কেজি ৬০ টাকা ছিল।

শীতের সবজির পাশাপাশি বাজারে এসেছে শীতের শাক। বাজার ভেদে এক আটি পালন শাক বিক্রি হচ্ছে ১০-২০ টাকা। পালনের প্রভাব কিছুটা দাম কমেছে অন্য শাকের। গত সপ্তাহে ১০-১৫ টাকা আটি বিক্রি হওয়া লাল ও সবুজ শাকের দাম কিছুটা কমে ৫-১০ টাকা আটি বিক্রি হচ্ছে। লাউ শাক পাওয়া যাচ্ছে ২০-৩০ টাকায়। ১০-২০ টাকা আটি পাওয়া যাচ্ছে পুঁইশাক।

সবজির পাশাপাশি কিছুটা দাম কমেছে কাঁচামরিচের। বাজার ও মানভেদে এক পোয়া কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০-২০ টাকা। গত সপ্তাহে যেখানে কোনো বাজারেই ১৫ টাকার নিচে এক পোয়া কাঁচামরিচ বিক্রি হয়নি।

খিলগাঁও তালতলা বাজার থেকে সবজি কেনা ফাতেমা বেগম বলেন, গত সপ্তাহে এক পোয়া শিম কেনেছিলাম ৩০ টাকা দিয়ে। এখন ৩০ টাকা দিয়ে এক কেজি শিম পাওয়া যাচ্ছে। কপির দামও কমেছে। গত সপ্তাহে যে কপির দাম ছিল ৫০ টাকা এখন তা ৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি বলেন, অনেকদিন ধরেই বাজারে সবজির দাম বাড়তি ছিল। এখন দাম কিছুটা কমছে। এটা ভালো লক্ষণ। কিন্তু টমেটো ও গাজার তো এখন আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাহির। এ দু’টি সবজির দামও কমা উচিত।

বাজারটির ব্যবসায়ী মো. ইলিয়াস বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে শিমের দাম চারভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। বাজারে দেশি টমেটো আসতে শুরু করেছে। কিছুদিন পরে শিমের মতো টমেটো, গাজরের দামও কমে যাবে। তবে বৃষ্টি বা বন্য হলে অথবা হরতাল-অবরোধ হলে সব ধরনের সবজির দাম আবার বেড়ে যেতে পারে।

এদিকে অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ, বয়লার মুরগি, ডিম, গরু ও খাসির মাংস এবং মাছের দাম। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩৫ টাকা কেজি। বয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকা কেজি। গরুর মাংস ৪৮০-৫০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৬৫০-৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাজারেই ইলিশ মাছ ভরপুর। ৬০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকা। আর পিস বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকায়। এক কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকা পিস। আর ছোট আকারের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা।

বাজারে ইলিশের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি থাকলেও এর প্রভাবে সপ্তাহের ব্যবধানে অন্য মাছের দাম কমেনি। আগের সপ্তাহের মতোই রুই মাছ বাজার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৪০০ টাকা কেজি। পাবদা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা কেজি। শিং মাছ ৩০০-৫০০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০-১৫০ টাকা, পাঙাস ১২০-১৫০ টাকা, সরপুটি ১৫০-২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

রামপুরার মাছ ব্যবসায়ী সুকুমার বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার কারণে গত সপ্তাহ থেকেই বাজারে ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে। দামও তুলনামূলক কম। নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে যে দামে ইলিশ বিক্রি হয়েছে, এখন সেই দামেই বিক্রি হচ্ছে। বড় বা ছোট কোনো ইলিশের দামই বাড়েনি।

এমএএস/আরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।