যে কারণে বেড়েছে ডিমের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:২৬ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৮
ফাইল ছবি

দেশব্যাপী হঠাৎ করেই বেড়েছে ডিমের দাম। রাজধানীতে ৩৫-৩৬ টাকা হালির নিচে কোনো ডিম নেই। প্রায় ১ মাস যাবত বেড়েছে দাম। কারণ হিসেবে উদ্যোক্তারা বলছেন, এর আগে টানা ৭-৮ মাস ডিম অস্বাভাবিক কম মূল্যে বিক্রি হওয়ায় অর্ধেকেরও বেশি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু শীতের প্রাদুর্ভাবে বেড়েছে ডিমের চাহিদা। ফলে উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে সমন্বয় না থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কম।

সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৩৬ টাকা হালি। সাদা ডিম অবশ্য এক দুই টাকা কম। অন্যান্য ডিমের দামও চড়া।

মিরপুরের ডিম বিক্রেতা শাহাদত হোসেন বলেন, পাইকারী বাজারে বাড়তি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে। ফলে বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অক্টোবরের প্রথম দিকে ডিমের দাম এক লাফে ডজনে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। তখন ডিমের দাম উঠেছিল ডজন ১২০ টাকায়। গত ৯ অক্টোবর রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি ডজন লেয়ার মুরগির ডিম খুচরা দোকানে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা তার ৩ দিন আগেও ১০০ থেকে ১০৫ টাকা ছিল।

কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা হারুন জাগো নিউজকে বলেন, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ সাত দফা দাবিতে ধর্মঘট করে পরিবহন শ্রমিকরা। এর পরই ডিমের দাম বাড়তে শুরু করে। এখন অবশ্য কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে।

তবে ডিমের দাম বাড়তি থাকলেও বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কিন্তু তুলনামূক কম। ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি।

মিরপুর নতুন বাজারের মুরগি বিক্রেতা হোসেন আলী জানান, ঢাকায় না পরলেও গ্রামে শীত পরছে। আর ব্রয়লার মুরগির জন্য শীত মারাত্মক। ফলে অনেকে মুরগি ছেড়ে দিচ্ছেন। এজন্য দাম পাইকারী বাজারে কম। ঢাকার আশপাশের পাইকারী বাজারে ৯০ টাকা কেজিতে মুরগি মিলছে। ভাড়া ও অন্যান্য খরচ যোগ করে ১২৫ টাকায় বিক্রি করছি।

এদিকে সহসাই মুরগির ডিমের দাম কমছে না বলে জানিয়েছেন উৎপাদকরা। তারা বলছেন, গত ৭-৮ মাস ধরে অব্যাহত লোকসানে অনেকে ডিম পাড়া মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন। অনেকে নতুন করে খামারে আর মুরগি তুলেননি। ফলে চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের গ্যাপটা সহসাই কমছে না।

তাদের আশা- দাম এই অবস্থায় থাকলে অনেকেই আবার ডিম উৎপাদনে উৎসাহিত হবেন। এতে ৫-৬ মাসের মধ্যে উৎপাদনও বাড়বে।

এ বিষয়ে ডিম উৎপাদক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহাম্মেদ সিদ্দিকী বলেন, ডিমের দাম যে খুব বেশি সেটা বলা যাবে না। মাস খানেক আগে যে দামে মানুষ ডিম খেয়েছে, সে দামে ডিম বিক্রি করলে কোনো খামারি টিকে থাকতে পারবে না। এমনটা হয়েছেও। অর্ধেকের বেশি ছোট খামারী মার খেয়েছেন, মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, স্বল্প দামে আমিষ পাওয়া যায় একমাত্র ডিমে। এখন বাজারে ৮ থেকে সাড়ে ৮ টাকায় ডিম পাওয়া যাচ্ছে। এর চেয়ে কম মূল্যে কিনে খেতে চাইলে আমাদের জন্য মুশকিল। কারণ আমরা খুব কম লাভে বাজারে ডিম ছাড়ছি।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিইএ) সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে পাইকারী বাজারে ডিম গড়ে ৩০-৩১ টাকা হালি দরে ড় হারে বিক্রি হচ্ছে। পরিবহন ব্যয় ও হাত বদলের কারণে খুচরা বাজারে দাম কিছুটা বেড়ে যাচ্ছে।

দেশব্যাপী পোল্ট্রি পণ্যের (ডিম ও মুরগীর) আজকের (সোমবার) পাইকারী দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, গড় হারে ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি সাদা ডিম ৭.৩০ টাকা, লাল (বাদামী) ডিম ৭.৫৫ টাকা।

গাজীপুর/মাওনায় লাল (বাদামী) ডিম সাড়ে ৭ টাকা, সাদা ডিম ৭.২৫ টাকা, ব্রয়লার মুরগী ৯০ টাকা কেজি।

বগুড়ায় লাল (বাদামী) ডিম ৭.৮০ টাকা প্রতিপিছ, সাদা ডিম ৭.৪০ টাকায়। অপরদিকে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগী ৯৫ টাকা আর সোনালী মুরগী ১৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বরিশালে লাল (বাদামী) ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৭.২০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগী ৯০ টাকায়।

ময়মনসিংহে লাল (বাদামী) ডিম প্রতিপিস ৭.৪০ টাকা, সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ৭.১০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগীর দাম পড়বে ৯০ টাকা কেজি।

রংপুরে লাল (বাদামী) ডিম প্রতিপিস বিক্রি হচ্ছে ৭.৪০ টাকায়, ব্রয়লার মুরগীর কেজি ১০২ টাকা।

চট্টগ্রামে প্রতিপিস লাল (বাদামী) ডিম কিনতে খরচ হচ্ছে ৭.৭০ টাকা, সাদা ডিম ৭.৩০ টাকা, আর ব্রয়লার মুরগী ৯০ টাকা কেজি।

সিলেটে লাল (বাদামী) ডিম বিক্র হচ্ছে ৮.১০ টাকায়। আর ব্রয়লার মুরগী প্রতি কেজি ৯৫ টাকায়।

রাজশাহীতে লাল (বাদামী) ডিম বিক্রি হচ্ছে ৭.২০ টাকায়, সাদা ডিম ৭ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগি ১০০ টাকা কেজি।

কক্সবাজারে লাল (বাদামী) ডিমের দাম পড়ছে প্রতিপিস ৭.৮০ টাকা, সাদা ডিম ৭.৬০ টাকা,

ব্রয়লার মুরগী বিক্রি হয়েছে ১১৫ টাকা দরে। 

এমএ/এমএমজেড/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।