রাশিয়ায় সরাসরি পণ্য রফতানির বাধা দূর হচ্ছে

মেসবাহুল হক
মেসবাহুল হক মেসবাহুল হক , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:১১ পিএম, ২৩ অক্টোবর ২০১৮

বাংলাদেশ ও রাশিয়ান ফেডারেশনের ব্যাংকসমূহের মধ্যে সরাসরি লেনদেনের কোনো সুযোগ ছিল না। ফলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা রাশিয়াতে সরাসরি পণ্য রফতানি করতে পারতেন না। দেশটিতে পণ্য রফতানিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা তৃতীয় কোনো দেশের সহায়তা নেয়া হতো।

তৃতীয় দেশের সহায়তায় পণ্য রফতানিতে দীর্ঘসূত্রতা, অতিমাত্রায় খরচ এবং পণ্য রফতানিতে ঝুঁকিসহ নানাবিধ সমস্যার মুখে পড়তে হতো ব্যবসায়ীদের। তবে, আশার কথা হলো, বেশিদিন আর এ সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না। শিগগিরই এসব সমস্যার সমাধানসহ বেশকিছু পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাশিয়ান ফেডারেশন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ও রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে বাণিজ্য, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি সহায়তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে মস্কোতে অবস্থান করছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম এ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২২ থেকে ২৪ অক্টোবরের মধ্যে দেশটির সঙ্গে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

মস্কোতে অনুষ্ঠিতব্য এ সভায় প্রস্তাব উপস্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন, রফাতনি উন্নয়ন ব্যুরো, বিএফটিআই, এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই, এমসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেটস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বৈঠকের আলোচনায় উঠে আসে যে, বাংলাদেশের অধিকাংশ পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা তৃতীয় পক্ষের কোনো দেশের মাধ্যমে রাশিয়াতে রফতানি করতে হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন দীর্ঘসূত্রতা বাড়ছে তেমনি পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা ঝুঁকিসহ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। দুই দেশের ব্যাংকসমূহের মধ্যে সরাসরি লেনদেন করা সম্ভব না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে সভায় মত প্রকাশ করা হয়।

রাশিয়া সফরের আগে এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রফতানি) তপন কান্তি ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ব্যাংকিং সমস্যা সমাধানে গত ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর মস্কোতে রাশিয়ান ফেডারেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ওই সময় ব্যাংকিং সমস্যা সমাধানে তারা আগ্রহ প্রকাশ করেন।’

তিনি বলেন, ‘এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে।’

অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, রাশিয়ান শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে শুল্কমুক্ত পণ্যের তালিকা চেয়েছে। রাশিয়ার বাজারে ওই সব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া যায় কিনা- তা তারা পরীক্ষা করে দেখবে। দেশটির সঙ্গে সরাসরি আর্থিক লেনদেন এবং পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধার বিষয়ে এবারের সভা (২২-২৪ অক্টোবর) ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আপাতত বিস্তারিত পণ্য তালিকা প্রস্তুত না করে রাশিয়ায় যেসব পণ্য শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে না সেগুলো অন্তর্ভুক্তির জন্য এবারের সভায় রাশিয়ান ফেডারেশনকে অনুরোধ করা হবে। এ বিষয়ে পরবর্তীতে একটি বিস্তারিত পণ্য তালিকা প্রস্তুতের জন্য বিএফটিআই ও বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনকে অনুরোধ করা হয়েছে।

গত বছরের জুনে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ পিটার্সবার্গে রাশিয়ান ফেডারেশনের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ডেনিস ভেলেনটিনোভিস মানটুরোভের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে মিলিত হন। ওই বৈঠকে তোফায়েল আহমেদ রাশিয়ার কাছে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) চেয়ে অনুরোধ জানান।

রাশিয়া জিএসপি দিলে উভয় দেশই লাভবান হবে বলে ডেনিস ভেলেনটিনোভিসকে জানান তোফায়েল আহমেদ। মন্ত্রী সেসময় বলেন, রাশিয়ায় বাংলাদেশের তৈরি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

এমইউএইচ/এমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।