বছরের সর্বোচ্চ দরপতন
>> দুই বছর আগের অবস্থানে ডিএসইএক্স
>> দর হারিয়েছে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার-ইউনিট
>> চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও বড় দরপতন
বড় দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। সোমবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) চলতি বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় দরপতন হয়েছে। দরপতনে প্রায় দুই বছর আগের স্থানে ফিরে গেছে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স।
ডিএসইর পাশাপাশি বড় দরপতন হয়েছে অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। মূল্য সূচকের পতনের পাশাপাশি দুই বাজারেই কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। সেই সঙ্গে দর হারিয়েছে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট।
ডিএসইতে এদিন লেনদেনে অংশ নেয়া মাত্র ৬৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ২৩৬টি। ৪০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের এমন দাম কমায় ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৭৯ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ২৫১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে এটি একদিনে ডিএসইএক্স’র সর্বোচ্চ পতন।
এমন পতনের কারণে ২০১৭ সালের ৯ জনুয়ারির পর সূচকটি সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারি ডিএসইএক্স সূচকটি ছিল পাঁচ হাজার ২১৪ পয়েন্টে। এরপর সোমবারের আগ পর্যন্ত গত ২২ মাসের মধ্যে সূচকটি আর কখনও পাঁচ হাজার ২৫১ পয়েন্ট বা তার নিচে নামেনি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। এ নির্বাচন নিয়ে সব মহলের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা রয়েছে। মূলত এ কারণেই পুঁজিবাজার দরপতনের বৃত্তে আটকে গেছে। ফলে চীনের দুই প্রতিষ্ঠান ডিএসইর অংশীদার হওয়া এবং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) দেড় হাজার কোটি টাকা পুজিঁবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার মতো সুসংবাদও বাজারে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, এ বছরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। নির্বাচন কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা রয়েছে। পুজিঁবাজারেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এছাড়া এ মুহূর্তে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কোনো কারণ আমি দেখি না।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্না ইমন বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হবে, এ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা- এ নিয়ে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন রয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব আমরা পুঁজিবাজারে দেখতে পারছি।
এদিকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিএসইর অপর দুটি মূল্য সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২০ পয়েন্ট কমে এক হাজার ২০৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ২৪ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৮৫৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৩৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৩৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। সেই হিসাবে লেনদেন কমেছে চার কোটি ২৭ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে কেপিসিএল’র শেয়ার। কোম্পানিটির ২৪ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ড্রাগন সোয়েটার ২৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২১ কোটি দুই লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সামিট পাওয়ার।
লেনদেনে এরপর রয়েছে- স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল, ডেল্টা লাইফ, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল, ইফাদ অটোস, ভিএফএস থ্রেড ডাইং, বিবিএস কেবলস এবং ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএসসিএক্স ১৪১ পয়েন্ট কমে নয় হাজার ৮০০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া ২৩২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৫টির। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬টির।
এমএএস/এমএআর/পিআর