পর্ষদের চাপে এবি ব্যাংকের এমডির পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:১১ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০১৮

ঋণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে জটিলতা, আর্থিক সূচকে অবনতি, পর্ষদ সদস্যদের সঙ্গে বনিবনাসহ নানা চাপে পদত্যাগ করেছেন বেসরকারি আরব-বাংলাদেশ ব্যাংকের (এবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মসিউর রহমান চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) তিনি পরিচালনা পর্ষদের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

পদত্যাগের বিষয়টি ব্যাংকের একজন পরিচালক নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাওয়ায় পদত্যাগের জন্য তার ওপর বিভিন্ন পক্ষের চাপ ছিল। এ রকম পরিস্থিতির মধ্যে বৃহস্পতিবার পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিলে তা গৃহীত হয়।

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে মসিউর রহমানের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, ঋণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের সঙ্গে তার বেশ দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। কিছু ব্যবসায়ীকে বড় অঙ্কের ঋণ দেয়ার জন্য বোর্ডের পক্ষ থেকে চাপও দেয়া হয়।

অপরদিকে এবি ব্যাংকের এক পরিচালকের সুপারিশে বেসরকারি অন্য ব্যাংকের এক পরিচালকের প্রতিষ্ঠানকেও ঋণ দিতে চাপ দেয়া হয়। ওই পরিচালকের আরেক প্রতিষ্ঠান এখনও ঋণখেলাপির তালিকায় রয়েছে। এ ঋণ অনুমোদন নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়।

মসিউর রহমান গত বছরের ৯ মে তিন বছর মেয়াদে এবি ব্যাংকের এমডি পদে নিয়োগ পান। এর আগে ব্যাংকটির ডিএমডি ছিলেন তিনি। ১৯৮৪ সালে সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরুর পর ২০০৩ সালে যোগদান করেন এবি ব্যাংকে।

এর আগে গত ডিসেম্বরে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আহমেদ ও পরিচালক ব্যারিস্টার ফাহিমুল হক পদত্যাগ করেন।

ওই সময় এমএ আউয়ালকে চেয়ারম্যান করা হলেও তিনি এখন আর পর্ষদে নেই। নানা অনিয়মের কারণে ব্যাংকটির বিভিন্ন আর্থিক সূচক এখন নিম্নমুখী। বেশ কিছুদিন ধরে তারল্য সংকটে রয়েছে ব্যাংকটি।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে এবি ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে বিদেশে নিবন্ধিত চার কোম্পানির নামে পাঁচ কোটি ১০ লাখ ডলার (প্রায় চারশ কোটি টাকা) ঋণের নামে পাচারের অনুসন্ধান করছে দুদক। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সিঙ্গাপুরে এসব অর্থ পাচার হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিদর্শনে উঠে আসে। অর্থ পাচারের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে পদত্যাগী চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক, সাবেক এমডি এম ফজলুর রহমান ও শামীম আহমেদ চৌধুরী এবং ব্যাংকের হেড অব ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড ট্রেজারি আবু হেনা মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে।

গত বছরের ৬ মে থেকে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষক দেয়া হয়েছে।

এদিকে বেশ কিছুদিন ধরে ব্যাপক তারল্য সংকটে ভুগছে বেসরকারি খাতের প্রথম প্রজন্মের এবি ব্যাংক। একটি ব্যাংক বর্তমানে একশ টাকা আমানতের বিপরীতে ৮৩ টাকা ৫০ পয়সা ঋণ দিতে পারে। সেখানে গত জুনে এবি ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত ঠেকেছে ৯২ দশমিক ৯৩ শতাংশে। ওই সময় পর্যন্ত ব্যাংকটির মোট ২২ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা আমানতের বিপরীতে ঋণ ছিল ২২ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। আর বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ধার ছিল এক হাজার ১০৪ কোটি টাকা। খেলাপি দেখানো হয় এক হাজার ৫২৫ কোটি টাকা, যা প্রায় ৭ শতাংশ।

এসআই/এএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।