একনেকে ১৭ প্রকল্প অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৩১ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০১৮

সরকারের শেষ সময়ে ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকার ১৭ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১১ হাজার ১৯৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৮১১ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১৯৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল। পরিকল্পনা সচিব মো. জিয়াউল ইসলাম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী এবং শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিসসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

একনেকে অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হলো- চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন এবং বাস ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ হাজার ২২৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিবাস নির্মাণ প্রকল্প, এতে ব্যয় হবে ২৫৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, ব্যয় ১ হাজার ৮৬৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। বৈরাগীপুল (বরিশাল)-টুমচর-বাউফল (পটুয়াখালী) জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ, ব্যয় ৩০২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণের নিমিত্তে নন্দিগ্রাম (ওমরপুর) তালোর -দুপচাঁচিয়া-জিয়ানগর –আক্কেলপুর গোপীনাথপুর জেলা মহাসড়ক এবং নন্দীগ্রাম (কাথম) কালিগঞ্জ-রাণীনগর জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ, ব্যয় ১৭৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান চত্বরে একটি বহুতল অফিস ভবন নির্মাণ, ব্যয় ৬৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম জোনের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ব্যয় ২ হাজার ৫৫১ কোটি ৯১ লাখ টাকা। যশোর অঞ্চল গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যয় ৯৫২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যয় ৯৩৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্সের (বর্তমান বাপার্ড) সম্প্রসারণ, সংস্কার ও আধুনিকায়ন, ব্যয় ৩৪৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন, ব্যয় ১৭২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। বৃহত্তর ঢাকা জেলা সেচ এলাকা উন্নয়ন, ব্যয় ১৩৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। রংপুর জেলার মিঠাপুকুর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ ও রংপুর সদর উপজেলায় যমুনেশ্বরী, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর তীর সংরক্ষণ ও নদী পুনঃখনন, ব্যয় হবে ১৩৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। উপকূলীয় চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন, ব্যয় ৯৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। দ্যা প্রজেক্ট ফর দ্যা ইমপ্রুভমেন্ট অব রিসোর্স ক্যাপাসিটিজ ইন দ্যা কোস্টাল অ্যান্ড ইনল্যান্ড ওয়াটারস, ব্যয় ২৮৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং সার সংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি নতুন বাফার গোডাউন নির্মাণ প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৬২৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বর্তমানে রাজশাহী মহানগরের পানি সরবরাহের কাভারেজ ৭১ শতাংশ এবং রাজশাহী ওয়াসা মোট পানি উৎপাদনে ৯৬ শতাংশ ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে। ভূ-গর্ভস্থ উৎস্য হতে অস্বাভাবিক পানি উত্তোলনের ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্থিতিতল প্রতি বছর শূন্য দশমিক ৫ থেকে ১ মিটার নিচে নেমে যাওয়ার ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর বিরূপ প্রভাব তৈরি হচ্ছে। রাজশাহী মহানগরীর পানির কভারেজ ৭১ শতাংশ হতে ১০০ শতাংশ উন্নীতকরণের জন্য চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় জি-টু-জি ভিত্তিতে ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণের জন্য এ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

অপর একটি প্রকল্প প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরের সব পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। ঢাকা শহরে ৭ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মীর মধ্যে ৩ হাজার কর্মীর বাবস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। অনুমোদিত এ প্রকল্পের আওতায় এখন ১ হাজার ১০০ জনকে দেয়া হবে। রাজশাহী ওয়াসার ভূ-উপরিস্থিত পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬২ কোটি ২২ লাখ টাকা।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, দুটি কারণে মঙ্গলবারের পর আজ আবার একনেক করতে হলো। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে যে বিনিয়োগ প্রয়োজন অর্থাৎ ১৮ শতাংশ বেসরকারি বিনিয়োগ দরকার। কিন্তু বেসরকারি বিনিয়োগ কম হচ্ছে। তাই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হচ্ছে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ১৪টি মঙ্গলবার পাওয়া গেছে। কিন্তু আজকেরটি নিয়ে ১০টি একনেক সভা হচ্ছে। বাকি ৪ মঙ্গলবারের মধ্যে সরকারি ছুটি এবং প্রধানমন্ত্রী বিদেশে থাকায় একনেক সভা করা সম্ভব হয়নি। কাজেই অতিরিক্ত একনেক সভা বলা যায় না। এখনো হাতে আছে ২৬টির মতো প্রকল্প। তাই আরও দুটো একনেক সভা করা সম্ভব হবে। তবে এসব নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। নির্বাচন হবে স্বাভাবিক নিয়মেই। বিদেশে যেমন ভোটের দিন ছুটি পর্যন্ত থাকে না।

মন্ত্রী আরও জানান, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাইরেও পানি সরবরাহ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এ ছাড়া একনেকে উপস্থাপিত গুলশান-বনানী লেক উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন না দেয়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হলে ওই এলাকার ১২ হাজার মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। তাদের কোথায় পুর্নবাসন করা হবে সেটি আগে ঠিক করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এমএ/এসআই/জেডএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।