নান্দনিকতায় সাজবে গুলশান লেক, বরাদ্দ ৪৮৮৬ কোটি টাকা

মামুন আব্দুল্লাহ মামুন আব্দুল্লাহ
প্রকাশিত: ১১:৫৫ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০১৮

# বিদেশিদের পরিবেশ উপভোগ করার জন্য থাকবে আলাদা ব্যবস্থা
# ১৬ কিলোমিটার নৌপথে চলবে নৌযান
# লেক এলাকায় আড়াই কিলোমিটারের একটি গোলাকার উড়ালসড়ক থাকবে
# বৃহস্পতিবার প্রকল্প অনুমোদন

গুলশান লেকের উন্নয়নে নেয়া হচ্ছে বিরাট উন্নয়ন পরিকল্পনা। হাতিরঝিলের পর রাজধানীবাসীর জন্য এটি হবে আরেকটি বড় বিনোদন কেন্দ্র। যেখানে বিদেশিদের পরিবেশ উপভোগ করার জন্য থাকবে আলাদা ব্যবস্থা। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে লেক এলাকায় গড়ে তোলা হবে উড়ালসড়ক-ওভারপাস। ১৬ কিলোমিটার নৌপথে চলবে নৌযান। এ জন্য গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এ বাবদ বরাদ্দ দেয়া হবে চার হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করবেন।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটি হবে অত্যন্ত নান্দনিক। এই লেক এলাকায় আড়াই কিলোমিটারের একটি গোলাকার উড়ালসড়ক থাকবে। গুলশান শুটিং ক্লাবের পেছন থেকে নিকেতন পর্যন্ত করা হবে এই উড়ালসড়ক। থাকবে আরও দুটি ওভারপাস। লেকের বিভিন্ন অংশে নয়টি সেতু থাকবে। দৃষ্টিনন্দন এসব সেতুতে হাতিরঝিলের মতো আলোকসজ্জার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া লেকের পাড়ে নির্মাণ করা হবে প্রায় সোয়া পাঁচ কিলোমিটার সড়ক। লেক ভরাট না করে কলামের ওপর নির্মাণ করা হবে ৫ দশমিক ৬০ কিলোমিটার সড়ক। একইভাবে কলামের ওপর থাকবে প্রায় ১২ কিলোমিটার হাঁটার পথ। এছাড়া লেকপাড়ে ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার পায়ে চলার পথ থাকবে। প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৫ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণের কাজ হবে। বাঁধাই করা হবে পাড়। কড়াইল বস্তির সামনে, গুলশান শুটিং কমপ্লেক্সের পেছনে, গাউসুল আজম মসজিদের পাশে থাকবে বিনোদনপার্ক। অ্যাম্পিথিয়েটার করা হবে কড়াইল বস্তির সামনে লেকপাড়ে।

একইসঙ্গে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পানিপথ থাকবে লেকে। এই পথে ওয়াটার বাস ছাড়াও চলবে ওয়াটার ট্যাক্সি। মগবাজার মোড় এলাকায় হাতিরঝিল থেকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের পেছনে কালাচাঁদপুর যাওয়া যাবে নৌপথে। হাতিরঝিল থেকে বনানী কবরস্থান পর্যন্তও চলাচল করবে নৌযান। মগবাজারে হাতিরঝিলের মুখে, বাড্ডাসংলগ্ন গুদারাঘাট, কালাচাঁদপুর ও বনানী-১১ নম্বর সেতুর কাছে করা হবে চারটি বোট স্টেশন। এ জন্যই ৯টি সেতু উঁচু করে তৈরি করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পটির পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। লেক উন্নয়ন প্রকল্পের নতুন কাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে উদ্বোধন করতে পারেন বলেও জানা গেছে।

লেক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রাজউকের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুর রহমান সুমন বলেন, লেকের খনন করা অংশ পরিষ্কার রাখার জন্য বাঁধ দিয়ে আলাদা করা হয়েছে। তিনি বলেন, গুলশান সোসাইটি লেকের আবর্জনা পরিষ্কারে সহায়তা করবে। প্রকল্পের ৭০ শতাংশ গুলশান লেকে পড়েছে, যে কারণে সংগঠনটির সঙ্গে তারা চুক্তি করেছেন। বনানী ও বারিধারা সোসাইটি গুলশান সোসাইটিকে এ কাজে সহায়তা করবে।

গুলশান সোসাইটির সদ্য বিদায়ী মহাসচিব ওমর শাহদাত বলেন, শিগগিরই লেক পরিষ্কারের কাজ শুরু করবে সোসাইটি। এলাকার বাসিন্দারাই এর খরচ বহন করবেন।

লেক সংরক্ষণ, পরিবেশ সুরক্ষা ও জলযান চলাচলের জন্য এ প্রকল্প। হাতিরঝিল যেভাবে তৈরি করা হয়েছে, অনেকটা এর চেয়ে উন্নতভাবেই এ প্রকল্প করা হবে। আর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রাজধানী ঢাকাবাসীর জন্য দ্বিতীয় উপহার হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান বলেন, গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক হাতিরঝিলের চেয়ে আরও বেশি মনোরম ও দৃষ্টিনন্দন হবে। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী চার বছরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে এবং নগরবাসী ও বাইরে থেকে আসা মানুষ এর সুফল পাবে।

এমএ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।