বড় সাইবার হামলার ঝুঁকিতে ২৮ শতাংশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৫৭ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বিশ্বব্যাপী দিন দিন বাড়ছে আইটি ঝুঁকি। হ্যাকাররা সব সময় সাইবার হামলার জন্য প্রস্তুত। এরপরও বড় সাইবার হামলা মোকাবেলায় দেশের ২৮ শতাংশ ব্যাংকের প্রস্তুতি নেই। ফলে যে কোনো সময় এসব ব্যাংকে হতে পারে সাইবার হামলা।

রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) ‘আইটি সিকিউরিটি অব ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ : থ্রেটস অ্যান্ড প্রিপেয়ার্ডনেস’ শীর্ষক সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ২৮ শতাংশ ব্যাংকে বড় সাইবার হামলা মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেই। আর আংশিক প্রস্তুতি রয়েছে ৩৪ শতাংশ ব্যাংকের। তবে যে কোনো ধরনের সাইবার হামলা মোকাবেলায় প্রস্তুত ৩৮ শতাংশ ব্যাংক।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান আলম। গবেষণা দলে ছিলেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. শিহাব উদ্দিন খান, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক কানিজ রাব্বী, বিআইবিএমের প্রভাষক মো. ফয়সাল হাসান, ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব টেকনোলজি শ্যামল বিদাশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবিএল) ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এফভিপি) মো. সাইফুল ইসলাম।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মো. আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের মুজাফফর আহমেদ, চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মাহবুব-উল- আলম, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসির কান্ট্রি ম্যানেজার ভরুনা প্রিয়াশান্ত কলামুনা, মধুমতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিউল্লাহ আজম, সাউথ ইস্ট ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মঈনুদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক দেবদুলাল রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোসাদ্দেক হোসেন কামাল, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো. ইয়াছিন আলী প্রমুখ।

bmm

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫০টি জালিয়াতির ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রায় ৪৩ শতাংশ এটিএম কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে ঘটেছে। এর পরেই রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং। প্রায় ২৫ শতাংশ ঘটনা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঘটেছে। প্রায় ১৫ শতাংশ এসিপিএস ও ইএফটির মাধ্যমে জালিয়াতি ঘটছে ব্যাংকিং খাতে। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১২ শতাংশ, ব্যাংকিং অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারে তিন শতাংশ, সুইফট এবং অন্যান্য মাধ্যম দিয়ে ঘটছে দুই শতাংশ জালিয়াতি ঘটছে।

সাবেক ডেপুটি গভর্নর মো. আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, বিশ্বব্যাপী দিন দিন আইটি ঝুঁকি বাড়ছে। ব্যাংকিং খাতও এর বাইরে নেই। এ খাতের ওপর যেসব আক্রমণ হচ্ছে তা জটিল। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে আলাদা গাইড লাইন তৈরি করেছে। এগুলো সঠিকভাবে পালন করলে ঝুঁকি কমবে।

অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, আইটি খাতে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকারদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। কারণ এ খাতটি অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইসলামী ব্যাংকের মাহবুব-উল- আলম বলেন, হ্যাকিংয়ের ঘটনা চলতে থাকবে তবে আমাদের মোকাবেলার প্রস্তুতি কতটুকু তা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে আইটি জ্ঞান স্পষ্ট থাকা জরুরি।

কমার্শিয়াল ব্যাংকের কান্ট্রি ম্যানেজার ভরুনা প্রিয়াশান্ত কলামুনা বলেন, হ্যাকাররা সব সময় সাইবার অ্যাটাকের জন্য প্রস্তুত। ব্যাংকিং খাত এ ঝুঁকির বাইরে নেই। ব্যাংকের সুবিধার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার অপেক্ষায় না থেকে নিজেদেরই উদ্যোগী হয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।

মধুমতি ব্যাংকের এমডি সফিউল্লাহ আজম বলেন, ব্যাংকিং খাত এখনও আন্তর্জাতিক হ্যাকারদের নজরে আসেনি। তবে অর্থনীতি বড় হলে হ্যাকিং বেড়ে যাবে। এজন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।

অধ্যাপক ড. মোসাদ্দেক হোসেন কামাল বলেন, ব্যাংক খাতে কর্মী নিয়োগের সময় আইটিতে জ্ঞান আছে কি-না তা যাচাই করতে হবে। ব্যাংক কর্মীদের আইটি খাতে গভীর জ্ঞান থাকা জরুরি। কারণ প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান না থকলে কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যা সৃষ্টি হয়।

পূবালী ব্যাংকের সাবেক এমডি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, আইটি খাতে ব্যাংকগুলো বাজেট বাড়াতে আগ্রহ দেখায় না। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে বুঝিয়ে আইটি খাতে বাজেট বাড়াতে হবে। এতে ব্যাংকের নিরাপত্তা জোরদার হবে।

এসআই/এএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।