ভারতজুড়ে প্রাণের পণ্য পৌঁছে দেয়া আমাদের লক্ষ্য : আহসান খান চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৩৫ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশের রফতানিতে মূল সমস্যা সীমান্ত অবকাঠামো ও কানেকটিভিটি বলে মন্তব্য করেছেন দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী।

তিনি বলেন, গত ২০ বছর ধরে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পণ্য রফতানি করে আসছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। প্রথম দিকে অনেক সমস্যা হত; যেমন-ট্যারিফ, নন-ট্যারিফ বাধা ছিল অন্যতম। কিন্তু এখন সেই সমস্যা অনেকটাই কমে গেছে। এখন রফতানিতে আমাদের মূল সমস্যা সীমান্ত অবকাঠামো ও কানেকটিভিটি।

ভারতে রফতানি প্রসঙ্গে আহসান খান চৌধুরী বলেন, ভারতে রফতানিতে ট্যারিফ কোনো সমস্যাই না। ভারতে মোট ৩৪টি প্রদেশ রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হলো শিগগিরই সমস্ত ভারতে প্রাণের পণ্য পৌঁছে দেয়া।

pran-

বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্বব্যাংক আয়োজিত দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য বাধাবিষয়ক এক অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় সেশনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

অনুষ্ঠানে ‘এ গ্লাস হাফ ফুল : দ্য প্রমিজ অব রিজিওনাল ট্রেড ইউনিয়ন ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও সমন্বয়ক সঞ্জয় কাঠুরিয়া। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তারের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন পিআরআই-এর ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহাম্মেদ।

আহসান খান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানিতে সমস্যা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। আমাদের অনেক পণ্যই ভারতে সহজলভ্য। তবে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। কিন্তু সেটা অবশ্যই ট্যারিফ সমস্যা নয়। কারণ ভারত-বাংলাদেশের বহু পণ্যের ওপর ট্যারিফ শূন্য করে দিয়েছে। এই সুযোগে ভারতের নতুন নতুন বাজারে প্রবেশ করছে অনেকে।

pran-

নন-ট্যারিফ বাধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আমাদেরও কিছু সমস্যা রয়েছে। আমাদের উচিত বিএসটিআইকে আরও গতিশীল ও আন্তর্জাতিক মান সম্মত করা।

প্রতিবেদনে কানেকটিভিটির কথা উঠে এসেছে উল্লেখ করে আহসান খান বলেন, আমি বলতে চাই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টাকে প্রতিবেদনে উঠিয়ে আনার জন্য বিশ্ব ব্যাংককে ধন্যবাদ। বছর বছর ভারতে পণ্য রফতানি গ্রোথ হচ্ছে। গড়পড়তায় ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তারপরও বলব ভারতে বাংলাদেশি পণ্য রফতানিতে আমাদের মূল সমস্যা সীমান্ত অবকাঠামো ও কানেকটিভিটি।

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে সাম্প্রতি সময়ে কিছু অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। কিন্তু আমাদের দেশের ট্রাক ভারতে প্রবেশ করতে পারে না। ভারত সীমান্তে নিয়ে পণ্য আনলোড করে আবার ওপারে ট্রাকে তুলতে হয়। ট্রাক সরাসরি প্রবেশ করতে পারলে রফতানি সমস্যা একেবারেই সমাধান হয়ে যাবে।

pran-

কানেকটিভিটি এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু জানিয়ে তিনি বলেন, এটির মাধ্যমেই দেশে রফতানি বাণিজ্য দিন দিন আরও বাড়বে। অনেক সমস্যার সমাধান হচ্ছে। আমাদের বর্ডার হাটগুলো সচল হচ্ছে। স্থানীয় মানুষ তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারছেন। আমার মনে হয়, আরও বেশি বর্ডার হাট প্রয়োজন।

কৃষিজাত পণ্যের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে এই শিল্প উদ্যোক্তা বলেন, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কৃষি পণ্য। কৃষি পণ্যের সম্ভাবনা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশে ক্রমেই কৃষি পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। রফতানিরও প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের কৃষি পণ্যের চাহিদা বহির্বিশ্বে ক্রমেই বাড়ছে। এখন দেখতে হবে, কৃষি পণ্য রফতানিতে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা আছে, সেটা সমাধান করলে কৃষিতে আমরা বড় এক্সপোর্টার দেশ হব। আমাদের ভাবতে হবে কৃষি উৎপাদন ও পণ্য নিয়ে। এ বিষয়টি নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তৈরি হতে পারে।

pran-

নেপাল সম্পর্কে তিনি বলেন, নেপালের সঙ্গে আমাদের সরাসরি কোনো সীমান্ত নেই। নেপালে বিমানে করে পণ্য নিয়ে যাওয়া সম্ভব না, নিতে হবে সড়কে। এজন্য আগে প্রয়োজন ভারতের ভিসা। ভারতের শিলিগুড়ি হয়ে নেপালে বাংলাদেশি পণ্য যেতে হয়। অন্য কোনো রাস্তা নেই। নেপালে ট্রাক যেতে হলে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। কারণ নেপালের ক্রেতাদের প্রতি আমাদের নজর দিতে হবে। পণ্য ব্যয় নিয়ে ভাবতে হবে।

আহসান খান বলেন, নেপালের বাজারে প্রাণের জন্য অনেক মজার মজার অভিজ্ঞতা রয়েছে। অনেক সুখবর রয়েছে। এখন যদি ভারত দিয়ে নেপালে সরাসরি বাংলাদেশি পণ্য ট্রাক প্রবেশ করতে পারে, তবে নেপালের বাজার নিয়ে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। এজন্য ভারতের সঙ্গে নেগোসিয়েশন ওপর জোর দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

ভুটানে রফতানির বিষয়ে তিনি বলেন, ভুটান আমাদের ছোট প্রতিবেশী। কিন্তু খুব ভালো দেশ। বাংলাদেশি সব পণ্যই ভুটানে বিক্রি করা যায়। বিশেষ করে আমাদের কৃষি পণ্যের বেশ চাহিদা রয়েছে।

প্রতিবেশী দেশগুলোরে সঙ্গে সম্পর্কের প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, রফতানি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর বিকল্প নেই। দিন দিন আমাদের সেই সম্পর্ক আরও উন্নত হচ্ছে। প্রাণ ভারত, নেপাল ও ভুটানের বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানি। তারপরও আমাদের ভাবতে হবে প্রতিবেশী দেশগুলোতে যেন আমরা সহজেই ভ্রমণ করতে পারি। এসব দেশের ট্যারিফ ও নন ট্যারিফ সমস্যাগুলোর সমাধানে আমাদের আরও ভাবতে হবে।

এমএ/জেএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।