‘জেড’ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বিপাকে বিনিয়োগকারীরা

সাঈদ শিপন
সাঈদ শিপন সাঈদ শিপন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৩৫ পিএম, ০৭ আগস্ট ২০১৮

দুর্বল মৌলভিত্তির বা ‘জেড’ গ্রুপের কোম্পানির বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ইতোমধ্যে দুটি কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করা হয়েছে এবং তালিকাচ্যুতের প্রক্রিয়ায় রয়েছে আরও ১৩টি কোম্পানি।

পর্যায়ক্রমে জেড গ্রুপের বাকি কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমও খতিয়ে দেখে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ। ডিএসইর এমন কঠোর অবস্থানের কারণে জেড কোম্পানির শেয়ার কেনা বিনিয়োগকারীরা বিপাকে পড়েছেন। অনেকেই লোকসানে শেয়ার বিক্রি করতে চাইলেও ক্রেতা পাচ্ছেন না।

ডিএসইর দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন, দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ার নিয়ে একশ্রেণির বিনিয়োগকারী বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করছে। বাজারে গুজব ছড়িয়ে কিছুকিছু কোম্পানির শেয়ারদাম বাড়িয়ে অস্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলো বছরের পর বছর ধরে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারছে না। এ জন্য বাজারকে শৃঙ্খলার ভেতরে আনতে তালিকাচ্যুতের মতো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

এদিকে শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, লোভে পড়ে কিছু বিনিয়োগকারী হুজুগে দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ার কেনেন। অথচ এসব কোম্পানি বছরের পর বছর লভ্যাংশ দিচ্ছে না, এমনকি উৎপাদান বা ব্যবসায়িক কার্যক্রমও বন্ধ। ডিএসই থেকে এসব কোম্পানি তালিকাচ্যুত করার যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা সঠিক। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল, যাতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এই তালিকাচ্যুতের ক্ষেত্রে একটি স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলতে হবে।

দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গত ১৮ জুলাই মডার্ন ডাইং অ্যান্ড স্ক্রিন প্রিন্টিং এবং রহিমা ফুডকে ডিএসইর ২০১৫ সালের লিস্টিং রেজুলেশনের ৫২ (১) (সি) ধারা অনুযায়ী মূল মার্কেট থেকে তালিকাচ্যুত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় লিস্টিং রেজুলেশনের ৫১ (১)(এ) ধারা অনুযায়ী, পাঁচ বছর ধরে লভ্যাংশ না দেয়া ১৩টি কোম্পানির পারফর্মেন্স রিভিউ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসই। এ বিষয়ে মঙ্গলবার (৭ আগস্ট) বিনিয়োগকরীদের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তাও প্রকাশ করেছে দেশের এই প্রধান শেয়ারবাজার।

যে ১৩ কোম্পানির বিষয়ে সতর্কবার্তা দেয়া হলো- মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, দুলামিয়া কটন, সমতা লেদার, শ্যামপুর সুগার মিলস, জিল বাংলা সুগার মিলস, ইমাম বাটন, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, কে অ্যান্ড কিউ (বাংলাদেশ), সাভার রিফ্রেক্টরিজ, বেক্সিমকো সিনথেটিক্স, শাহিন পুকুর সিরামিক এবং জুট স্পিনার্স।

এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ১৩টি কোম্পানির বিষয়ে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। যারা এই কোম্পানির শেয়ার কিনছে এটা তাদের জন্য সতর্কবার্তা। এই কোম্পানিগুলোকে ডাকা হবে এবং উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা হবে। তারপর আমরা আমাদের অ্যাকশনে চলে যাবো। এটা এখানেই থেমে থাকবে না। জাঙ্ক এবং জেড কোম্পানির সব শেয়ারের ক্ষেত্রে আমাদের এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, আমাদের পরিচালনা পর্ষদ শতভাগ নিরপেক্ষ। আমরা অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা জাঙ্ক শেয়ার নিয়ে খেলাধুলা করার সুযোগ দেব না। ভালো শেয়ার নিয়ে খেলা করেন, আমরা হ্যাপি। জাঙ্ক এবং জেড কোম্পানির বিষয়ে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি, কারণ আমরা ভালো কিছু করতে চাই। এভাবে চলতে পারে না। ভালো কোম্পানির শেয়ার পড়ে থাকবে, আর নন-পারফর্মেন্স কোম্পানিকে আপনি উৎসাহিত করবেন, এটা হতে পারে না। আমরা বোর্ডে আছি, বোর্ডের একটা দায়িত্ব আছে। আমরা যা কিছু করবো, একটি ভালো পুঁজিবাজারের জন্য করবো।

s

ডিএসইর এমন কঠোর পদক্ষেপের কারণে মঙ্গলবার লেনদেনের শুরু থেকেই উৎপাদন বন্ধ থাকা ও লোকসানি জেড ক্যাটাগরির শেয়ার নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। ফলে লেনদেনের শুরুতেই জেড ক্যাটাগরির বেশকিছু কোম্পানিতে ক্রেতা সংকট দেখা যায়। ফলে দিনের লেনদেন শেষে জেড গ্রুপের ৪৩টি কোম্পানির মধ্যে ২৯টিরই দাম আগের দিনের তুলনায় কমে যায়। আর ডিএসই যে ১৩টি কোম্পানির বিষয়ে সতর্কবার্তা প্রকাশ করে তার সাতটিই দাম কামার শীর্ষ দশে স্থান করে নেয়।

আরাফাত নামের এক বিনিয়োগকারী জাগো নিউজকে বলেন, দাম বাড়বে এমন সংবাদ শুনে জেড গ্রুপের একটি কোম্পানির শেয়ার কিনেছিলাম। কিন্তু দুটি কোম্পানি তালিকচ্যুত করার পর ওই কোম্পানির শেয়ারের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। কিন্তু এ দামেও শেয়ার বিক্রি করতে পারছি না। এ পরিস্থিতিতেই ১৩টি কোম্পানির বিষয়ে সতর্কবার্তা প্রকাশ করেছে ডিএসই। ফলে শেয়ারের দাম আরও কমে গেছে।

শুধু আরাফাত নয়, অনেক বিনয়োগকারী এখন জেড গ্রুপের কিছু কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করতে ক্রেতা পাচ্ছেন না। মঙ্গলবার বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ঘুরে দেখা যায়, জেড গ্রুপের শেয়ার কিনেছেন এমন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুঁজি হারানোর আতঙ্ক রয়েছে। অনেকে দাম কমিয়ে শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব দিচ্ছেন, কিন্তু কোনো ক্রেতা পাচ্ছেন না।

মো. শহিদুল নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, দাম বাড়বে এমন তথ্যের ভিত্তিতে ৩৩ টাকা দরে একটি কোম্পানির কিছু শেয়ার কিনে ছিলাম। কিন্তু এরপরই ডিএসই দুটি কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করে, যার কারণে টানা দাম কমে একপর্যায়ে ২২ টাকায় চলে আসে। এরপর একটি মাধ্যমে বাজারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে জেড গ্রুপের আর কোনো কোম্পানিকে ডিএসই তালিকাচ্যুত করবে না। এতে আবার কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়তে থাকে। কিন্তু মঙ্গলবার ডিএসই থেকে তথ্য প্রকাশের পর দাম কমিয়েও কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করতে পারিনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, অনেক কোম্পানি উৎপাদনে নেই, দীর্ঘদিন ধরে লভ্যাংশ দেয় না। অথচ সেগুলোর দাম বাড়তে থাকে। হুজুগে মেতে অনেকে আবার সেই শেয়ার কেনে। কাজেই নতুন নতুন বিনিয়োগকারী যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য প্রয়োজনে তালিকাচ্যুত করা উচিত। এ তালিকাচ্যুত ইন্টারন্যাশনাল স্টান্ডার্ড মেনে করা উচিত।

তিনি বলেন, এ কোম্পানিগুলো তালিকাচ্যুত না করলে যার কাছে শেয়ার আছে সে হয় তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কিন্তু যে বিনিয়োগকারী নতুন করে এসব শেয়ার কিনবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরের জন্য তালিকাচ্যুত করতে হবে। তারপর কোম্পানি আইনে দেখতে হবে শেয়ারহোল্ডারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে। কোম্পানির যে সম্পদ আছে তা বিক্রি করে শেয়ারহোল্ডাররা পাবেন কি না তা কোম্পানি আইনে দেখতে হবে।

এমএএস/জেডএ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।