রিজার্ভ চুরি : জানুয়ারির মধ্যেই মামলা
চুরি হওয়া রিজার্ভের টাকা উদ্ধারে জানুয়ারির মধ্যেই নিউইয়র্কের আদালতে মামলা করবে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে সেখানকার প্রতিষ্ঠিত চারটি ল’ ফার্মের কাছ থেকে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এদের মধ্য থেকে একটি ফার্মকে মামলা পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
রোববার (৫ আগস্ট) সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে এ সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের বৈঠকে মামলার বিষয়ে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সূত্র জানায়, ফিলিপাইন থেকে আরও ২৮ মিলিয়ন ডলার ফেরত আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই অর্থ পাওয়া গেলে মামলা নিয়ে অন্যভাবে চিন্তা করা হবে। তবে আপাতত : ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক এবং ফিলিপাইনের বিরুদ্ধে নিউইয়র্ক আদালতে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
তবে মামলা পরিচালনার ব্যয় দু’ভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কমিশন বা দৈনিক ভিত্তিতে পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হবে। সব দিক পর্যালোচনা করেই মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তবে এ মামলার ব্যয় অনেক বেশি হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
কিন্তু সরকারকে মামলা করতেই হবে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকাকে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো পর্যবেক্ষণ করছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে লড়াই করতেই হবে।
এদিকে হ্যাকিংয়ের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতের আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দাবি করলে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই মামলাটি করতে হবে। তবে ক্রিমিনাল মামলা ১০ বছরের মধ্যে করা যায়। সেটি পরে করলেও সমস্যা নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে উপস্থিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, জানুয়ারির মধ্যেই মামলা করতে হবে। এজন্য নভেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক সব কাজ সম্পন্ন করা হবে।
ল’ ফার্ম নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা চারটি ফার্মের প্রাকযোগ্যতা যাচাই করে একটি ফার্মকে নিয়োগ দেব । তাদের সেবামূল্য পরিশোধের দুটি উপায় আপাতত : চিন্তা করা হয়েছে। যেটি আমাদের জন্য লাভবান হবে সেটাই গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, উদ্ধারকৃত অর্থের শতকরা একটি অংশ আইনজীবীদের সেবামূল্য দেয়াটাই আমাদের জন্য বেশি উপযোগী হবে বলে মনে হচ্ছে। কোনো কারণে মামলার ফলাফল বিপক্ষে গেলে আমাদের আর্থিক ক্ষতি কম হবে। তবু অবস্থার প্রেক্ষিতে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এখন পর্যন্ত মামলার ফলাফল আমাদের পক্ষে আসবে বলে আশাবাদী। কারণ ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে আমরা অর্থ আমানত হিসেবে রেখেছিলাম। এ দায় তারা কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।
এর আগে গত ৩ মার্চ এক বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম ইউনুসুর রহমান, সিআইডির প্রতিনিধিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আপাতত সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি, মোকদ্দমা করব। এপ্রিলের মধ্যেই করব। মামলা হবে নিউইয়র্কে।’
তিনি বলেন, আমাদের সংস্থাগুলোর তদন্ত চলছে। সিআইডিকে দ্রুত তদন্ত শেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়া গেলেই মামলার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
মামলা পরিচালনার জন্য নিউইয়র্কে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের অর্থমন্ত্রী বলেন, মামলার জন্য এখনো ল’ ফার্ম নিয়োগ দেয়া হয়নি। তবে নিউইয়র্কেই ল’ ফার্ম নিয়োগ দেয়া হবে। সেখানে বাঙালি আইনজীবীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।
সে সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, এপ্রিলের মধ্যে নিউইয়র্কে রিজার্ভ চুরির মামলা করা হয়তো সম্ভব হবে না। মামলার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এখনও সম্পন্ন হয়নি। বিশেষ করে সিআইডি যে তদন্ত করছে সে তদন্তের প্রতিবেদন এখনও পাওয়া যায়নি। মামলায় এ প্রতিবেদনের প্রয়োজন হবে। তবে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মামলার সুযোগ রয়েছে। তার আগেই মামলা করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। সুইফটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হ্যাক্টড করে পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া এ অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া দুই কোটি ডলার ফেরত আসে। তবে ফিলিপাইনে যাওয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে এখনও ফেরত আসেনি ছয় কোটি ৬৪ লাখ ডলার। আর এ ডলার উদ্ধারে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।
এমইউএইচ/এএইচ/জেআইএম