ব্যাংকের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছাচ্ছে ‘ভাতা’

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৫০ পিএম, ৩১ জুলাই ২০১৮

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেই ব্যাংকের মাধ্যমে বিনা খরচে মিলছে আর্থিক অনুদান ও ভাতা। সম্প্রতি ব্যাংকিং সুবিধার বাইরে থাকা সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কাছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এ ভাতা পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের অধীনে প্রাথমিকভাবে এ সেবা চালু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তা ছড়িয়ে দেয়া হবে দেশের প্রতিটি গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

দরিদ্রমুখী প্রযুক্তিভিত্তিক আর্থিক সেবা কার্যক্রম জোরদারে পাইলট প্রকল্প হিসেবে তিনটি ব্যাংক দেশের কয়েকটি জেলায় কাজ শুরু করেছে। ব্যাংকগুলো হলো- ব্যাংক এশিয়া, মধুমতি ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংক। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ জেলায় কাজ করছে মধুমতি ব্যাংক, নরসিংদী, নওগাঁ ও সিলেট জেলার বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে এনআরবিসি এবং কিশোরগঞ্জে কাজ শুরু করেছে ব্যাংক এশিয়া।

মধুমতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সফিউল আজম জাগো নিউজকে বলেন, “সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে কাজ করছে মধুমতি ব্যাংক। এ লক্ষ্যে ২০১৬ সালে 'ঘরের পাশে সারাদেশে' স্লোগানে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করি আমরা। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করেছে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ভাতা পরিশোধ, ইউটিলিটি বিল কালেকশন, ঋণ বিতরণ ও আমানত সংগ্রহসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ ব্যাংকিং সেবা ছড়িয়ে দেয়া হবে।”

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই কর্মসূচির বিষয়ে মধুমতি ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. শাহীন হাওলাদার বলেন, ‘সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় তিন ধরনের ভাতা পরিশোধ হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা। পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথমে গোপালগঞ্জ জেলায় কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ২২টি ইউনিয়নে প্রায় ২০০টির মতো ওয়ার্ডে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এসব এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোট ২০ হাজার ৪৭২ জনের অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এ হিসাবে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো গোপালগঞ্জ জেলার সব ইউনিয়নে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এসব সেবা দেয়া হবে।’

জানা গেছে, বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়নাধীন বয়স্ক ও বিধবা, মাতৃত্বকালীন, মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতাসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক সামাজিক কর্মসূচির আওতায় প্রায় ৬৮ লাখ উপকারভোগী সরকারের কাছ থেকে সরাসরি নির্ধারিত অঙ্কের আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন। বাজেটে অতিরিক্ত ১০ লাখ দরিদ্র জনগণকে নতুন করে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮ লাখে।

এনআরবিসি ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব এফআই অ্যান্ড এডিসি কাজী মো. সাফায়েত কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘একজন ভাতাভোগীকে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দ্বারস্থ হয়ে অনুদানের অর্থ গ্রহণ করতে হতো। অনেক সময় বিভিন্ন খরচের কথা বলে টাকা কম দিতো। হয়রানির শিকার হতো ভাতাভোগীরা। এখন এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভাতা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের এটুআই কর্মসূচির মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন ভাতা পৌঁছে দিচ্ছে এনআরবিসি ব্যাংক। এটুআই প্রকল্পের সহযোগী হতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমরা সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের সঙ্গে বহু পথ একসঙ্গে চলার আশা করছি। প্রাথমিকভাবে নরসিংদী, নওগাঁ ও সিলেটে কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সাড়ে ২৮ হাজারের বেশি হিসাব খুলে প্রায় চার কোটি টাকা ভাতা পরিশোধ হয়েছে।’

‘সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে বিনামূল্যে এসব সেবা দেয়া হচ্ছে। চলতি বছরে প্রায় তিন লাখ সুবিধাবঞ্চিত লোককে এ সেবার আওতায় আনা হবে’ বলেও জানান তিনি।

এদিকে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কাছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আর্থিক অনুদান বা ভাতা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে ব্যাংক এশিয়া। দেশব্যাপী ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোর (ইউডিসি) মাধ্যমে এ সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ব্যাংকটি। মাস্টারকার্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন ভাতা ইলেকট্রনিক উপায়ে সহজে ও স্বল্প খরচে উপকারভোগীদের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্য পাইলটিং কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে। এর অভিজ্ঞতার আলোকে সারাদেশে ইলেকট্রনিক পেমেন্ট কার্যক্রম সম্প্রসারণ করবে ব্যাংক এশিয়া।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক মো. আবুল বশর জাগো নিউজকে বলেন, ‘গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি ঘরে ঘরে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।’

তিনি বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কাছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ভাতা পরিশোধে তিনটি ব্যাংক কাজ করছে। ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করছে। আমাদের প্রত্যাশা, আগামীতে দেশের প্রতিটি গ্রামের মানুষ ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় আসবেন। এ লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কাছে কম খরচে ব্যাংকিং সেবা দিতে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারির পরের বছর ব্যাংক এশিয়া প্রথমে এ সেবা চালু করে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত ২০টি ব্যাংককে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালুর অনুমতি দিয়েছে। কার্যক্রম শুরু করেছে ১৬টি ব্যাংক। ২০১৮ সালের মার্চশেষে ব্যাংকগুলোর মোট এজেন্ট ও আউটলেটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৯০৫টি। এসব এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৬৮ হাজার ৭৯৭ জন। এ হিসাবে জমা রয়েছে এক হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা।

এসআই/এমএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।