বিডি ওয়েল্ডিং শেয়ার কারসাজি মামলার রায় ১৭ আগস্ট


প্রকাশিত: ১২:২৯ পিএম, ০৬ আগস্ট ২০১৫

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রডস (বিডি ওয়েল্ডিং)-এর শেয়ার কারসাজি মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে মামলাটির রায় আগামী ১৭ আগস্ট ঘোষণা করা হবে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে শুরু করে বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত বাদি বিবাদি পক্ষের যুক্তিতর্ক ও শুনানি বিএসইসির স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) হুমায়ুন কবীর দীর্ঘ এ বাদি বিবাদির যুক্তিতর্ক মনোযোগ সহকারে শুনেন। এরপর তিনি মামলাটির রায় আগামী ১৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেন।

মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে প্রসিকিউটর মো. হাসিবুর রহমান দিদার বলেন, সৌদি আরবের আল-আওয়াদ নামের একটি প্রতিষ্ঠান বিডি ওয়েল্ডিংয়ে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইমেলে তথ্য আদান প্রদান করে। এ তথ্যের কারণে সে সময় বিডি ওয়েল্ডিং কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে থাকে। এ সুযোগে অভিযুক্তরা তাদের হাতে থাকা শেয়ার বাজারে বিক্রি করে দেয়। শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে বাজার থেকে অনৈতিকভাবে আসামি এনায়েত করিম ৫৩ লাখ ৮৯৩ টাকা হাতিয়ে নেয়।  

আসামি পক্ষের আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ বলেন, আমার মক্কেল এস এম নূরুল ইসলাম বিডি ওয়েল্ডিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও স্পন্সর শেয়ার হোল্ডার। সে সময় ইমেলে সৌদি আরবের আল-আওয়াদ কোম্পানির সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান হয়েছে ঠিকই। তবে তিনি আইটি এক্সপার্ট না হওয়ায় এই ইমেলগুলো ভূয়া ছিল তা তিনি বুঝতে পারেনি।

অপর একজন আইনজীবী বলেন, এনায়েত খান সৌদি বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি ছিলেন। সে সময় সৌদি আরবের আল আওয়াদ গ্রুপ বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে তার সঙ্গে ইমেলে যোগাযোগ করে। তবে এতে শেয়ার বাজারে কোনো কোম্পানির শেয়ার দরে প্রভাব পড়বে এমন কোনো আলোচনা হয়নি। তাছাড়া এনায়েত খান দেশের অন্যন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীর মতোই তিনিও শেয়ার বাজারে ব্যবসা করেন।

এর আগে মামলায় তিনজন সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষীরা হলেন- তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক সহকারী পরিচালক তানিয়া শারমিন, পরিচালক আবুল কালাম, পরিচালক শেখ মাহবুব উর রহমান। মামলার বাদি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মিজানুর রহমান।

জানা গেছে, ২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বিডি ওয়েল্ডিংয়ের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। তখন ৬ টাকা মূল্যের শেয়ারের দাম ওঠে ৫০ টাকা। আর এ সময়ে বিপুল পরিমাণ মুনাফা অর্জন করেন অভিযুক্তরা। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে করে বিডি ওয়েল্ডিংয়ের পরিচালনা পর্ষদের নিকট শেয়ারের দাম বাড়ার পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য রয়েছে কি-না জানতে চেয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ও বিএসইসি নোটিশ পাঠায়। নোটিশের জবাবে কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রথমে জানানো হয়, দর বাড়ার কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য তাদের জানা নেই। কিন্তু এর কয়েক দিন পরই তারা জানায়, সৌদি আরবের আল-আওয়াদ গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেয়ারের মালিকানা বিক্রির ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে। সৌদি গ্রুপটি এ দেশে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত ই-মেইলে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

বিএসইসির কাছে পুরো বিষয়টিই রহস্যজনক মনে হলে সংস্থার তৎকালীন পরিচালক এ টি এম তারিকুজ্জামান ও সহকারী পরিচালক তানিয়া শারমিনের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির তদন্তে উঠে আসে, ই-মেইলগুলো আসলে ভূয়া ও বানোয়াট ছিল। সৌদি আরবের সঙ্গে এসব ই-মেইলের কোনো সম্পর্ক নেই। তদন্ত প্রতিবেদনে অনেককে অভিযুক্ত করা হলেও পরে ২০০৭ সালের ২২ মে বিডি ওয়েল্ডিংয়ের শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এনায়েত করিম ও বিডি ওয়েল্ডিংয়ের এমডি এস এম নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

মামলার বিবরণ সূত্রে জানা গেছে, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে ২০০৭ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে একই বছরের ২৯ মার্চ পর্যন্ত মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যমূলক ই-মেইলে তথ্য আদান-প্রদান করে শেয়ারের মূল্য কারসাজির মাধ্যমে বৃদ্ধি করেছে। যার মাধ্যমে আসামিরা বিপুল পরিমাণ আর্থিক লাভবান হয়েছে। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ এর ১৭ (এ) ১৭ (বি) এবং ১৭ (ই) ধারার বিধান লংঘন করেছেন।

এসআই/আরএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।