পোশাক শ্রমিকদের বেশি নির্যাতন করেন সুপারভাইজাররা
* ডিসেম্বরের পর আর দেশে থাকছে না অ্যালায়েন্স
* মনিটরিং চলমান রাখা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ
* ‘পোশাক খাতে নিরাপদ কর্মসংস্থানের বড় ক্ষেত্র বাংলাদেশ’
* হেল্পলাইনে ২ লাখ ৩৩ হাজারেরও বেশি শ্রমিকের অভিযোগ
তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় নিরাপদ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র এখন বাংলাদেশ।। এ খাতে এত বেশি কর্মসংস্থান অন্য কোনো দেশ করতে পারেনি। গত ৫ বছরে সবপক্ষের সহযোগিতায় কারখানার নিরাপত্তায় ব্যাপক কাজ হয়েছে। এ সময়ে দেশে গার্মেন্ট কারখানার সংখ্যা কমলেও রফতানি আয় বেড়েছে। এর মানে দেশে মানসম্মত ব্যবসা বেড়েছে, বায়াররা বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের পর অ্যালায়েন্স এ দেশে আর কাজ করবে না। অ্যালায়েন্সের রেখে যাওয়া কাজ বা মনিটরিং কার্যক্রম চলমান রাখাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
রোববার বিকেলে রাজধানীর হোটেল ওয়েসটিনে উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেইফটির (অ্যালায়েন্স) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা। গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য চালু হওয়া ‘আমাদের কথা’ হেল্পলাইন নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
এ সময় বক্তব্য দেন অ্যালায়েন্সের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টও জিম মরিয়ার্টি, বোর্ড মেম্বার শন ক্যাডি, বেসরকারি সংস্থা ফুলকির প্রতিষ্ঠাতা ও এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সুরাইয়া হক, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা তপন চৌধুরী, শ্রমিক প্রতিনিধি শাহনাজ আক্তার ও কামরুজ্জামান।
জিম মরিয়াটি বলেন, এই দেশে অ্যালায়েন্স ও অ্যাকর্ডের অধীনে গার্মেন্ট সেক্টরের নিরাপত্তায় ব্যাপক কাজ হয়েছে। ভবিষ্যতে আমাদের তত্ত্বাবধানে উন্নয়ন করা কারখানায় রানা প্লাজা বা তাজরীনের মতো দুর্ঘটনা ঘটবে না। যদি দুর্ঘটনা হয় সেটা হবে সরকারের অধীনে থাকা গার্মেন্টগুলোতে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আগামী ডিসেম্বরের পরে আর বাংলাদেশে কাজ করব না। যে উদ্দেশ্যে আমরা এসেছিলাম, সেটা পূরণ হয়েছে। প্রাথমিক সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে। এখন এই সংস্কার ও মনিটরিং কার্যক্রম চলমান রাখাই হবে সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরও বলেন, গার্মেন্ট খাতের সংস্কার চলমান রাখা ও ট্রেনিং প্রোগ্রামসহ মনিটরিং নিশ্চিতে একটি অর্গানাইজেশন থাকা উচিত। যেখানে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধি থাকবে।
শন ক্যাডি বলেন, গত ৫ বছরে গার্মেন্ট থাতের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যাপক কাজ হয়েছে। সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের সহযোগিতায় কারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেছে। তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় নিরাপদ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র এখন বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, সংস্কার কাজ করতে গিয়ে কিছু কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে দেশে গার্মেন্টের সংখ্যা কমলেও রফতানি আয় বেড়েছে। এর মানে হলো- দেশে মানসম্মত ব্যবসা বেড়েছে, বায়াররা বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
সুরাইয়া হক বলেন, ‘আমাদের কথা’ হেল্পলাইন চালু হয় ২০১৪ সালের মাঝামাঝিতে। এ পর্যন্ত এই হেল্পলাইনের মাধ্যমে ২ লাখ ৩৩ হাজারেরও বেশি কল এসেছে, যার ৮০ ভাগই নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে।
এই সফলতার পর সব দেশের সব গার্মেন্টের জন্য এই সেবা উন্মুক্ত করেছে অ্যালায়েন্স। আগে অ্যালায়েন্সভুক্ত এক হাজার কারখানার শ্রমিকরা তাদের অভিযোগের বিষয়ে ফোন দিতে পারতো। এখন সবাই দিতে পারবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণত শ্রমিকদের ওপর সুপারভাইজারদের নানা নির্যাতনের বিষয়ে ফোন বেশি এসেছে। এর বাইরে বেতন না হওয়া, আগুন লাগাসহ ছোটখাট দুর্ঘটনা, ট্রেড ইউনিয়ন করতে না দেয়ার বিষয়গুলোতে অভিযোগ বেশি ছিল।
কামরুজ্জামান বলেন, অ্যালায়েন্সের অধীনে আমাকেও অনেক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। যেগুলো চাকরি ছাড়াও আমদের ব্যক্তি জীবনে কাজে আসবে। এ ছাড়া অ্যালয়েন্সের হেল্পলাইনে কল করেও বিভিন্ন সময় অনেক সমস্যার সমাধান পেয়েছি।
এমএ/জেডএ/জেআইএম