মার্ক বাংলাদেশ শেয়ার কেলেঙ্কারি : আসামিদের জেল-জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:০৯ পিএম, ২৪ জুন ২০১৮

মার্ক বাংলাদেশ শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় অভিযুক্ত কোম্পানিসহ ৪ আসামিকে ৫০ লাখ টাকা করে জরিমানা ও ৩ আসামিকে ৫ বছর করে কারাদণ্ড করেছেন শেয়ারবাজার বিষয়ক ট্রাইবুন্যাল।

রোববার ট্রাইবুন্যালের বিচারক আকবর আলী শেখ এই রায় ঘোষণা করেছেন।

এ মামলার আসামিরা হলেন- মার্ক বাংলাদেশ শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমাম মুলকুতুর রহমান, ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল হাই ও পরিচালক সালমা আক্তার।

এরমধ্যে ইমাম মুলকুতুর রহমান মৃত ও অন্য আসামিরা শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতারের আদেশ দেন বিচারক আকবর আলী শেখ। তবে এখনও তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

অভিযুক্ত ইমাম মুলকুতুর রহমান মারা গেলেও ট্রাইবুন্যাল তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানে না। যে কারনে ইমাম মুলকুতুর রহমানকেও জেল এবং জরিমানার রায় দেয়া হয়েছে।

আসামিদের গ্রেফতার বা তাদের আত্মসমর্পণের দিন থেকে কারাদণ্ডের হিসাব শুরু হবে। এ ছাড়া আর্থিক জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে আসামিদের আরও অতিরিক্ত ৬ মাস কারাভোগ করতে হবে বলে মামলার রায়ে বলা হয়েছে।

রায়ে রিচারক বলেন, অভিযুক্তরা যোগসাজশে লাভবান হয়েছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। অভিযুক্তরা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯-এর ১৭ ধারার (ই) (২) উপ-ধারা লঙ্ঘন করেছেন। যা একই অধ্যাদেশের ২৪ ধারায় শাস্তিযোগ্য।

রোববার রায় ঘোষণার সময় ট্রাইবুন্যালে বিএসইসির আইনজীবী মাসুদ রানা খান উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে কোম্পানিটির শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় ১২ জুন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। আর গত ৬ জুন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. এম.এ রশীদ সরকার সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া ৭ মে বুয়েটের অধ্যাপক ড. মাহমুদ হেলালী ও অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহুরুল হক ও ১২ এপ্রিল বিএসইসির নির্বাহী পরিচালন এটিএম তারিকুজ্জামান সাক্ষ্য দেন।

সাক্ষ্যে এ টি এম তারিকুজ্জামান মার্ক বাংলাদেশ শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি পরিদর্শন করেছেন বলে জানান। এ ক্ষেত্রে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দ্ধারা স্থায়ী সম্পদের মূল্য অনেক বেশি সত্যতা পান। এ ছাড়া এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে বেনামে শেয়ার বিক্রি করে বলে সাক্ষ্য দেন তিনি।

গত ৩ এপ্রিল এ মামলায় সাক্ষ্য দেন বিএসইসির আরেক নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদ; যিনি মার্ক বাংলাদেশ শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো এমন ঠক ও প্রতারক কোম্পানি জীবনে কোনদিন দেখেননি বলে সাক্ষ্য দেন।

একইসঙ্গে শেয়ারবাজারে ধসের জন্য যে কয়টি কোম্পানি দায়ী, মার্ক বাংলাদেশ তারমধ্যে প্রথম সারির বলে মন্তব্য করেন তিনি। ওইদিন ফরহাদ আহমেদ বলেন, মার্ক বাংলাদেশের স্থায়ী সম্পদের বাজার মূল্য বেশি দেখিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোম্পানিটির শেয়ার ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ করা হয়। যার সঙ্গে কোম্পানিটির পর্ষদ জড়িত ছিল।

এর আগে বিএসইসির উপ-পরিচালক এএসএম মাহমুদুল হাসান ও সাবেক উপ-পরিচালক শুভ্রকান্তি চৌধুরী সাক্ষ্য দেন।

১৯৯৯ সালে শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে ২০০০ সালে মার্ক বাংলাদেশ শিল্প অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিটিসহ ৪ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন উপপরিচালক আহমেদ হোসেন মামলা দায়ের করেন। সিকিউরিটিজ অধ্যাদেশ এর ২৫ ধারা অনুযায়ী এ মামলা করা হয়। সিএমএম আদালতের ১৩৬৪/২০০০ নম্বরের মামলাটি ট্রাইবুন্যালে হয়েছে ৩/১৬ নং। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত থেকে এই ট্রাইব্যুনালে মামলাটি স্থানান্তরিত হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২১ জুন শেয়ারবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর পরে মার্ক বাংলাদেশের রায় হল ১১তম। এর আগে ট্রাইব্যুনাল ৯টি মামলার সম্পূর্ণ ও ১টি মামলার আংশিক রায় ঘোষণা করেন। বিচারিক কার্যক্রম শুরুর পর প্রথম রায় ঘোষণা করা হয় ওই বছরের ৩ আগস্ট। ওই রায়ে ফেসবুকে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রচারের দায়ে মাহবুব সরোয়ার নামে এক ব্যক্তিকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।

এরপরে ২০১৫ সালের ১৭ আগস্ট বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোডের (বর্তমান নাম বিডি ওয়েল্ডিং) শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলায় কোম্পানির ব্যবস্থাপনা নুরুল ইসলাম ও ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক এনায়েত করিমকে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা করে জরিমানা করেন ট্রাইব্যুনাল।

আর ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট ১৯৯৬ সালের চিক টেক্স শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলায় কোম্পানির এমডি মাকসুদুর রসুল ও পরিচালক ইফতেখার মোহাম্মদকে ৪ বছর করে কারাদণ্ড ও ৩০ লাখ টাকা করে জরিমানার রায় ঘোষণা করা হয় ও ২৫ অক্টোবর প্লেসমেন্ট কেলেঙ্কারির মামলায় একমাত্র আসামি সাত্তারুজ্জামান শামীমকে ও ৩০ নভেম্বর সাবিনকো শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় কোম্পানির সাবেক এমডি কুতুব উদ্দিনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়।

২০১৬ সালের ২০ এপ্রিল সিকিউরিটিজ প্রমোশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের (এসপিএম) শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শেলী রহমান ও গ্রাহক সৈয়দ মহিবুর রহমানকে ২ বছর করে কারাদণ্ড এবং ১৫ লাখ টাকা করে আর্থিক জরিমানা করা হয়।

২০১৭ সালের ২৩ এপ্রিল প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ মামলায় কোম্পানিটিসহ আসামি এম এ রউফ চৌধুরী ও সাঈদ এইচ চৌধুরীকে বেকশুর খালাস দেয়া হয় এবং ওই বছরের ৩০ মে চিটাগাং সিমেন্ট (বর্তমানে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট) মামলায় আলোচিত রকিবুর রহমানসহ টি কে গ্রুপের মালিক আবু তৈয়ব এবং বুলবুল সিকিউরিটিজ হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম শহিদুল হক বুলবুলকে খালাস দেয়া হয়।

চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি এইচএমএমএস ফাইন্যান্সিয়াল কনসালটেন্সি অ্যান্ড সিকিউরিটিজ ও সিকিউরিটিজ কনসালটেন্টস লিমিটেডের শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় ৮ আসামি খালাস পেয়েছেন। এ ছাড়া এই ২ মামলা থেকে এইচএমএমএস ফাইন্যান্সিয়াল কনসালটেন্সি অ্যান্ড সিকিউরিটিজ ও সিকিউরিটিজ কনসালটেন্টস লিমিটেডকে খালাস দেয়া হয়েছে। এই ২ মামলার আসামিরা হলেন- হেমায়েত উদ্দিন আহমেদ, মোস্তাক আহমেদ সাদেক, সৈয়দ মাহবুব মুর্শেদ, শরিফ আতাউর রহমান, আহমেদ ইকবাল হাসান, এম. জে আজম চৌধুরী, শহীদুল্লাহ ও প্রফেসর মাহবুব আহমেদ।

এমএএস/এনএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।