বাস্তবায়নই বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ
# ব্যাংক লুটেরাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি
# ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে আনা
# স্থিতিশীল রাজনৈতিক কর্মসূচি
প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের বাস্তবায়নকেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ব্যবসায়ী শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সংগঠনটি বলছে, প্রস্তাবিত বিশাল অঙ্কে এই বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং তদারকের মান নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় এই বিশাল বাজেট বাস্তবায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে। একইসঙ্গে, বাজেটের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিনিয়োগ বাধা দূর করতে ব্যাংক খাতে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা ও ব্যাংকে জনগণের আমানত লুটপাটকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তিও চায় সংগঠনটি।
শনিবার রাজধানীর মতিঝিল ফেডারেশন ভবনে আয়োজিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দীন। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। এ সময় এফবিসিসিআইয়ের অন্যান্য পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
মহিউদ্দীন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ৭.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের টার্গেট ধরা হয়েছে। এটি অর্জন করতে হলে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ কমাতে হবে। সাধারণত দুটি কারণে ব্যবসায়ীরা ঋণ খেলাপি হয়। একটি হলো- সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীরা লোকসানের সম্মুখিন হয়ে খেলাপি হয়ে যায়, অন্যটি ইচ্ছাকৃত। কেউ কেউ ব্যাংকের টাকা মনিপলিশন করে, লুটপাট করে। তাদের জন্য এফবিসসিআই এডভোকেসি করে না।
সভাপতি বলেন, যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যাংকে রোবারী (লুটপাট) করছেন, সেসব লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দেখতে চাই। দৃষ্টান্তমূলত শাস্তি চাই।
তিনি বলেন, কারা ব্যাংকিং খাতের জনগণের আমানত তছরূপ করছেন, সেই তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আছে। আমরা আশা করব, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক সাফল্য আজ বিশ্ব দরবারে রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু ব্যাংকিং খাত নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। মুষ্টিমেয় কিছু স্বার্থন্বেষী মহলের কারণে ব্যাংকিং খাতে এ ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে, যা আমাদের পলিসির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বিষয়টি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার প্রস্তাব করছি- যাতে করে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন বজায় থাকে।
ব্যাংকের সুদের হার নিয়ে তিনি বলেন, বাজেটের কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ তরান্বিত করতে হবে। ব্যবসায়ীদের কাছে বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ আছে। কিন্তু সে টাকা বিনিয়োগ করতে প্রয়োজন ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। অনেক ব্যবসায়ী দেওলিয়া হয়েছেন। আমরা আর ওই ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি চাই না।
একটি বড় দলের নেত্রী জেলে আছেন। এটা একটি বিচারিক প্রক্রিয়া। বড় বড় আইনজ্ঞরা এই বিষয়টি দেখছেন। যে কোনো বিষয়ে আন্দোলন করা তাদের রাজনৈতিক অধিকার। ব্যবসায়ীরা রাজনীতি করে না ব্যবসা করে। ইকোনমি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোন জ্বালাও-পোড়াও রাজনৈতিক কর্মসূচি আমরা সমর্থন করি না।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটের তুলনায় ১৬.০৬ শতাংশ বেশি। বাজেট বাস্তবায়নে অর্থায়ন ও অর্থব্যয় সঠিকভাবে করতে না পারায় প্রতিবছরই বাজেট সংশোধন করতে হয়। এজন্য এ বাজেট বাস্তবায়নে বছরের শুরু থেকেই সুষ্ঠু মনিটরিং জোরদার করা জরুরি।
নতুন বাজেটে ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এ ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীন ঋণ ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ২১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা (ব্যাংক ব্যবস্থা ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা এবং জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্প থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা) নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা ব্যাংক খাতের উপর নির্ভরশীলতা উৎপাদনশীল খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
প্রস্তাবিত বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের এই উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য অনেকক্ষেত্রে করদাতাদের উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা হয় এবং আইন-কানুন-এর অপপ্রয়োগ ও কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছা ক্ষমতার কারণে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হয়ে থাকে। আমরা ভাবিষ্যতে এই ধরনের ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে ব্যবসা বাণিজ্য করার নিশ্চয়তা চাই। এইসঙ্গে, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিবিড় মনিটরিং ও পর্যবেক্ষণ জরুরি।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যে গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং রাজস্ব আয় যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই হারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়নি। তাই কর প্রশাসনকে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং অটোমেশনসহ সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে অধিক নজর দেয়ার জন্য প্রস্তাব করছি।
বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি, জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে আজকের বাজারে এ সীমা ৫ লাখ টাকায় উন্নীত করা প্রয়োজন। কিন্তু আমরা ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বর্ধিত করার প্রস্তাব করেছি। এটি পুনর্বিবেচনার জন্য আবারও জোর দাবি জানাচ্ছি।
এমএ/জেএইচ/এমএস