ভোটার টানার চমক অর্থমন্ত্রীর ‘ব্রিফকেসে’

মামুন আব্দুল্লাহ মামুন আব্দুল্লাহ
প্রকাশিত: ০১:১৭ এএম, ০৫ জুন ২০১৮

আসছে নতুন বছরের বাজেট প্রস্তাবনা। প্রস্তাবিত এ বাজেটে বাড়বে না করের বোঝা। কমিয়ে আনা হবে ভ্যাট আদায়ের ধাপ। একই সঙ্গে বাড়বে ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর সীমা, বাড়বে সামাজিক সুরক্ষার আওতা। বেকার সমস্যা সমাধানে বিশাল কর্মপরিকল্পনার রূপরেখাও থাকছে এবারের বাজেট প্রস্তাবনায়।

শুধু তাই নয়, ব্যাংক খাত নিয়ে ওঠা নানা সমালোচনা থেকে বাঁচতে দেয়া হবে ’ব্যাংকিং কমিশন’র ঘোষণা। এর সবকিছুই হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্ষমতাসীন দলকে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আনতেই ‘ভোটার তুষ্টি’র বাজেট প্রণয়ন হতে যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কালো (রঙ) ব্রিফকেসে থাকা এ বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরবেন আগামী ৭ জুন দুপুর ১২টায়। সবার নজর এখন সেদিকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবারের বাজেটে সবচেয়ে বড় দিক কর ব্যবস্থাপনা। মুহিতের আমলে প্রতি বছর যে হারে বাজেটের আকার বাড়ানো হয়েছে এবার সে হারে তা বাড়ছে না। এর মূল কারণ আগামী বাজেটে নতুন করে করের বোঝা বাড়ানো হবে না। উল্টো ব্যবসায়ীদের খুশি করতে কর্পোরেট কর কমানো হবে।

গত তিন বছর ধরে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়নি। নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার তা বাড়ানো হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা করা হতে পারে।

ভোটার তুষ্টির এ বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বিশেষ নজর দিচ্ছে সরকার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে নতুন করে ১১ লাখ দরিদ্র মানুষকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা হচ্ছে।

এছাড়া নির্বাচনের আগে বদলে যাবে গ্রামীণ রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো। দেয়া হবে মেগা প্রকল্পের প্রতি জোর। বাজেটের পর গ্রামীণ সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট, ধর্মীয় উপসনালয় সংস্কার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। ব্যবসায়ীদের খুশি রাখতে নতুন কোনো করারোপ করা হবে না। চালু হবে না নতুন ভ্যাটআইনও। সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে বাজেটে তাদের জন্য অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হবে।

ব্যাংকিং কমিশন

ব্যাংক খাতে লুটপাট ও হু হু করে বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণ নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। এবার সেই সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে গঠন করা হচ্ছে ব্যাংকিং কমিশন। বাজেট বক্তৃতায় সে ব্যাপারে ঘোষণা দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী।

সরকারি কর্মচারীদের ইনক্রিমেন্ট

আগামী বাজেটে সরকারের ১২ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধির (ইনক্রিমেন্ট) ঘোষণা দেয়ার সম্ভাবনা আছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের এ বাজেটে চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা খাতে বেশি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।

কর্মসংস্থান

বেড়েছে প্রবৃদ্ধির হার। সেই তুলনায় বাড়েনি কর্মসংস্থান। ফলে বেকার সমস্যাও বেড়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। বাজেট প্রস্তাবনায় আগামী অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে কর্মক্ষম এক লাখ বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার ঘোষণা আসতে পারে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হবে।

b

ভ্যাট সংগ্রহের ধাপ কমছে

প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাটহারে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। বর্তমানে নয়টি ভ্যাটহার আছে। এটি কমিয়ে ছয়টিতে নামানো হতে পারে। বর্তমানে দেড়, আড়াই, তিন, চার, সাড়ে চার, পাঁচ, ছয়, ১০ ও ১৫- এই নয়টি হারে ভ্যাট আদায় হয়। সংকুচিত ভিত্তিমূল্যে গণনা করা হয় এসব হার। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে এই হার হতে পারে দুই, তিন, চার, ছয়, ১০ ও ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে অগ্রিম ব্যবসায় ভ্যাট (এটিভি) এক শতাংশ বাড়িয়ে পাঁচ শতাংশ করা হতে পারে।

সামাজিক সুরক্ষা

নতুন বাজেটে নতুন করে ১১ লাখ দরিদ্র মানুষকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা হবে। ফলে এ কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ৮৬ লাখ। নতুন এ সুবিধাভোগীর মধ্যে বয়স্ক ভাতা কর্মসূচির আওতায় যোগ হবে আরও পাঁচ লাখ মানুষ, বিধবা ভাতা কর্মসূচিতে যোগ হবে এক লাখ ৩৫ হাজার এবং অসচ্ছল প্রতিবন্ধী আরও এক লাখ ৭৫ হাজার যোগ হবে।

শুধু সুবিধাভোগীর সংখ্যাই বাড়ানোর ঘোষণা দেবেন না অর্থমন্ত্রী বরং সামাজিক সুরক্ষা খাতে বিভিন্ন ভাতাও বাড়বে। আগামী বাজেটে মাতৃত্বকালীন ভাতা ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করার ঘোষণা দেবেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মায়ের (শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান এমন মা) ভাতাও ৩০০ টাকা বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমান ল্যাকটেটিং মায়ের মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা। নতুন বাজেটে এ ভাতা বেড়ে দাঁড়াবে ৮০০ টাকায়।

সূত্র জানায়, আসছে বাজেটে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় ক্যান্সার, কিডনি, স্টোক, প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচিতে অর্থ বাড়ানো হবে। চলতি বাজেটে এক্ষেত্রে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও আসছে বাজেটে ৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আটটি খাতে ৭৫ লাখ জনগোষ্ঠীকে ভাতা দেয়া হচ্ছে।

পাশাপাশি আরও থাকছে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ১০ হাজার, জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচিতে চা শ্রমিক ১০ হাজার, দারিদ্র্য মাতৃত্বকালীন মা এক লাখ, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মা ৫০ হাজার এবং ভিজিডির সুবিধাভোগী ৪০ হাজার।

সূত্র আরও জানায়, সারাদেশে বর্তমান বয়স্ক ভাতা কর্মসূচির আওতায় ৩৫ লাখ উপকারভোগী রয়েছে। আগামী বাজেটে এটি বেড়ে দাঁড়াবে ৪০ লাখে। বিধবা ও দুস্থ মহিলা ভাতার আওতায় আছেন ১২ লাখ ৬৫ হাজার জন। নতুন বাজেটে এ কর্মসূচির আওতায় সুবিধা পাবেন ১৪ লাখ মহিলা। অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতার অধীনে আসন্ন বাজেটে আট লাখ ২৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে তা ১০ লাখে উন্নীত করা হবে।

এমএ/এমএআর/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।