আইন নেই, সার্কুলারে চলছে ইসলামিক ব্যাংকিং

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৪৯ পিএম, ০৪ জুন ২০১৮

দেশে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের জন্য আলাদা কোনো আইন নেই। কিছু সার্কুলার দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে এসব ব্যাংক। তারপরও প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের চেয়ে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে আমানত ও ঋণে উচ্চ প্রবৃদ্ধি। তাই নতুন নতুন পণ্য এনে গ্রাহকদের কাছে সেগুলো আরও জনপ্রিয় করতে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের জন্য আইন প্রয়োজন।

সোমবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে ‘ইসলামিক ব্যাংকিং অপারেশনস অব ব্যাংকস’শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় এসব কথা বলেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা। এ সময় বিআইবিএম এর পক্ষ থেকে এক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের চেয়ে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে আমানত ও ঋণে উচ্চ প্রবৃদ্ধি। প্রচলিত ব্যাংকে ২০১৭ সালে ঋণের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ১৮ শতাংশ, সেখানে ইসলামিক ব্যাংকিং ঋণের প্রবৃদ্ধি ২২ দশমিক ৩১ শতাংশ। একইভাবে আমানতেরও প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেশি। প্রচলিত ব্যাংকে ২০১৭ সালে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। সেখানে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড.তৌফিক আহমদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের মুজাফফর আহমেদ চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের পরামর্শক এম. আজিজুল হক, এক্সিম ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. আলমগীর। গবেষণা দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. মহব্বত হোসেন, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ এবং এক্সিম ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং হেড অব শরিয়হ সেক্রেটারিয়েট আবুল কাশেম মো. সাইফুল্লাহ। আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরও সুদৃঢ় করতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যাংকগুলোকে আলাদা সেল করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সব ধরনের কমপ্লায়েন্স এবং শরিয়াহ’র মূলনীতি বজায় রেখে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। তিনি বলেন, সব ইসলামিক ব্যাংক বা শাখায় শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয়ভাবে শরিয়াহ বোর্ড করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের পরামর্শক এম. আজিজুল হক বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের ধারণা ঠিক না করেই ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে ইসলামিক ব্যাংকিং অনেক দূর এগিয়েছে। বাংলাদেশেরও ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে ভালো করার সুযোগ রয়েছে। এজন্য ব্যাংকারদের এ ধরনের ব্যাংকিংয়ের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ জরুরি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. আলমগীর বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের পরিসর অনেক বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় দক্ষ জনবল না থাকায় সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় বিশেষ সার্টিফিকেশন কোর্স চালু করতে হবে। যেখানে ব্যাংকারদের ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। এসব সার্টিফিকেটধারী অভিজ্ঞ ব্যাংকার পদোন্নতি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ পাবে।

বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের রিবার (নির্দিষ্ট লাভের উদ্দেশ্যে ঋণ-দান) বিষয়টি আরও বিশ্লেষণ করার সুযোগ রয়েছে। কারণ রিবা এবং সুদের বিষয়ে অনেকে আপত্তি তোলেন। পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের জন্য অনেক সার্কুলার আছে। কিন্তু কোনো ধরনের আইন নেই। আইন থাকলে পরিপূর্ণ কার্যক্রমে সহায়ক হয়। ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে আরও নতুন নতুন পণ্য এনে গ্রাহকদের কাছে সেগুলো আরও জনপ্রিয় করার সুযোগ রয়েছে।

এক্সিম ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্য সংকট দূর করা যত সহজ প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তা সম্ভব নয়। তিনি ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার ওপর জোরারোপ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিং এখন ধর্মীয় বিষয়ের মধ্যে আবদ্ধ নেই। মালয়েশিয়ার ৬০ শতাংশ গ্রাহক ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক। অনেক বিদেশি ব্যাংক ইসলামিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে সাফল্য পেয়েছে। সুতরাং দক্ষতার সঙ্গে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের সুযোগ রয়েছে।

এসআই/ওআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।