কার্ডে ঈদের কেনাকাটা করলেই ছাড়
ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে নতুন জামা-কাপড়। জমজমাট বিকিকিনি। ঈদের এ আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দিতে দেশের ব্যাংকগুলো কেনাকাটায় দিচ্ছে আকর্ষণীয় নানা অফার। এর মধ্যে কার্ড দিয়ে বিল পরিশোধ করলেই মিলছে ফ্রি-সহ নগদ মূল্য ছাড়।
দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ডধারীদের জন্য নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের শোরুমে কেনাকাটায় ১০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ মূল্য ছাড়ের সুবিধা দিচ্ছে। পোশাক-পরিচ্ছদ, জুতা, জুয়েলারি কেনাকাটা থেকে শুরু করে ইফতারেও রয়েছে বিশেষ অফার। অনলাইনে কেনাবেচা ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিল পরিশোধ করলেও নগদ মূল্য ছাড় দেয়া হচ্ছে।
ঈদের অফার সম্পর্কে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবি)-এর কার্ড ডিভিশনের প্রধান নেহাল এ হুদা জাগো নিউজকে বলেন, রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ইউসিবি কার্ড হোল্ডারদের অকর্ষণীয় অফার দিচ্ছে। এর মধ্যে রমজান উপলক্ষে ইফতার ও ডিনারে একটি পণ্য কিনলে একটি ফ্রি সুবিধাসহ সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ ছাড় রয়েছে। ওয়েস্টিন, রেডিসন ব্লু, আমারি ঢাকাসহ নামিদামি ৪০টি হোটেলে রয়েছে বিশেষ মূল্য ছাড়। এছাড়া ৫০টি ব্র্যান্ড শো-রুমে রয়েছে ঈদ কেনাকাটায় নগদ মূল্য ছাড়।
তিনি আরও বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে কার্ডে অফার দেয়ার মূল উদ্দেশ্য পণ্যের প্রচার করা। পাশাপাশি ডিজিটাল লেনদেনে গ্রাহককে উৎসাহ দেয়া। এতে বেশ সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে।
ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের কেনাকাটায় ক্রেতাদের নগদ মূল্য ছাড়ের পাশাপাশি আকর্ষণীয় নানা অফার দেয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্যে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে তারকা হোটেল ও রেস্তোরাঁয় ইফতার ও সেহরির বিলে রয়েছে ‘বাই ওয়ান গেট ওয়ান’ অফার, অর্থাৎ একটি কিনলে একটি ফ্রি। এছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শো-রুমে ঈদের কেনাকাটায় ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডধারীদের ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়া হচ্ছে।
দ্য সিটি ব্যাংকের অ্যামেক্স কার্ডে বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্টে বুফে ডিনারসহ ইফতারিতে ছাড় দিয়েছে। র্যাডিসন ব্লু, লা মেরিডিয়েন, ঢাকা রিজেন্সি, আমারি, লেকশোরসহ রাজধানীর ৩৯টি হোটেল ও রেস্তোরাঁতে এ অফার রয়েছে। এসব হোটেলে অ্যামেক্স কার্ডধারীরা একটি ডিনারের সঙ্গে পাচ্ছেন একটি ডিনার ফ্রি। এ ছাড়া এ কার্ডের গ্রাহকরা ঈদের কেনাকাটায় বিভিন্ন শো রুমে ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের সকল ক্রেডিট কার্ডে আড়ংয়ে কেনাকাটায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশ ব্যাক সুবিধা দেয়া হচ্ছে। একই কার্ডে আড়ংয়ের অনলাইন থেকে কিনলে দেয়া হচ্ছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশ ব্যাক সুবিধা। এ ছাড়া বাটায় ১০ শতাংশ ক্যাশ ব্যাক সুবিধা রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের সকল ক্রেডিট কার্ডে। প্রিমিয়ার ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের ৩০টি দেশি ব্র্যান্ড থেকে কেনাকাটায় দিচ্ছে ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য ছাড়।
ঢাকা ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটায় ৫০টি আউটলেটে রয়েছে ১০ থেকে ৬০ ভাগ পর্যন্ত ছাড়। ঢাকা ও চট্টগ্রামের নাম করা ২৮টি হোটেল রেস্তোরাঁতে ‘বাই ওয়ান গেট ওয়ান’ সুবিধা রয়েছে এ ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে।
ডাচ-বাংলা ব্যাংক তাদের নেক্সাস প্লাটিনাম, টাইটানিক ক্রেডিট কার্ড ও ভিআইপি ব্যাংকিং ডেবিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য তারকা রেস্তোরাঁতে ইফতার ও রাতের খাবারে ছাড়ের ব্যবস্থা করেছে। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এসব কার্ডের গ্রাহকরা একজনের বিলে খেতে পারবেন চারজন।
যমুনা ব্যাংক তাদের কার্ডধারীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ১০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। এ ছাড়া কয়েকটি ব্যাংক বিভিন্ন সুপার সপ বিশেষ করে আগোরা, স্বপ্ন, মীনাবাজার, প্রিন্স বাজারের মতো প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকদের নগদ ছাড়ে কেনাকাটায় সুযোগ দিয়েছে।
প্রাইম ব্যাংকের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স ও জনসংযোগ বিভাগের প্রধান মনিরুজ্জামান টিপু জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের খুশিকে আরও আনন্দময় করতে প্রাইম ব্যাংক কার্ড হোল্ডারদের কেনাকাটায় ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত নগদ ছাড় দিয়েছে। ২৬টি ব্র্যান্ড শো রুমে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত নগদ মূল্যছাড় দেয়া হয়েছে।
অনলাইনে কেনাকাটায় রয়েছে ২০ শতাংশ ছাড়। এছাড়াও লং বিচ, সি-গাল, অ্যাম্বাসাডরসহ ২৮টি নামিদামি হোটেলে থাকছে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ নগদ ছাড়। ব্যাংকটি জারা, এসএ ওয়ার্ল্ড, সেলাইঘরসহ আটটি ফ্যাশন হাউসে দিচ্ছে ১০ থেকে ২০ শতাংশ ছাড়। জুয়েলারি মেকিং চার্জের ওপর ৩৫ শতাংশ ছাড় থাকবে ডি ডামাস, তানিষ্ক, গোল্ড গ্যালারিতে।
এদিকে ঈদে কেনাকাটায় ক্যাশ ব্যাক অফার ঘোষণা করেছে ব্র্যাক ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ। ঈদ কেনাকাটার পেমেন্ট বিকাশে করলেই ২৫ শতাংশ ক্যাশ দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোর মোট কার্ড রয়েছে প্রায় এক কোটি ২৯ লাখ। এর মধ্যে ডেবিট কার্ড রয়েছে এক কোটি ১৮ লাখ। ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ৯ লাখ ৫৪ হাজার। বাকি এক লাখ ৫০ হাজার প্রিপেইড কার্ড রয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে ১১০০ কোটি টাকা কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়। সক্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট রয়েছে ২ কোটি ১০ লাখ। সারাদেশে ব্যাংকগুলোর ৩৮ হাজার পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) রয়েছে। সক্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট রয়েছে ২ কোটি ২ লাখ।
এসআই/আরএস/জেআইএম