ব্যাংকিং খাতে নীতিবান নেতৃত্বের অভাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৫৪ পিএম, ২৪ মে ২০১৮

* প্রশিক্ষণে বাজেটও কমিয়েছে ব্যাংকগুলো
* এক বছরে কর্মী কমেছে ৯ হাজার ২০ জন
* এক তৃতীয়াংশ ব্যাংক তাদের মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যয় করতে ব্যর্থ

ব্যাংকিং খাতে নীতিবান নেতৃত্বের অভাব রয়েছে বলে মনে করেন ৬১ শতাংশ ব্যাংকার। তারা জানিয়েছেন, এ খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি নির্মূলে দরকার নীতিবান নেতৃত্ব। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটি উঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট অব ব্যাংকস’ শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল।

ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে ব্যাংকগুলো কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়নে ব্যয় ৫০ শতাংশ কমিয়েছে। ১০০ টাকা অপারেটিং ব্যয়ের মধ্যে মাত্র ২৫ পয়সা কর্মীদের উন্নয়নে ব্যয় করেছে ব্যাংক, যা খুবই হতাশাজনক। আর্ন্তজাতিকভাবে অপারেটিং খরচের ২ থেকে ৩ শতাংশ ব্যয় করা হয়। একই সঙ্গে এক তৃতীয়াংশ ব্যাংক তাদের মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যয় করতে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রতিনিধি দলের অন্য ছয়জন হলেন- বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক মাসুদুল হক, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক রেক্সোনা ইয়াসমিন, বিআইবিএমের প্রভাষক আনিলা আলী, বিআইবিএমের প্রভাষক লামিয়া রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম এবং আল- আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান মো. মাজহারুল ইসলাম।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রশিক্ষণে বাজেটও কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোতে এক বছরে কর্মী কমেছে ৯ হাজার ২০ জন। ২০১৬ সালে দেশের ব্যাংকগুলোতে কর্মী ছিল ৯০ হাজার ২৬৫ জন। ২০১৭ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮১ হাজার ২৪৫ জন।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্যে দেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড.তৌফিক আহমদ চৌধূরী। তিনি দক্ষতার সঙ্গে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। একই সঙ্গে প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, বিআইবিএমের সাবেক চেয়ার প্রফেসর এস এ চৌধুরী, প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ আব্দুল্লাহ, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং কোম্পানি সেক্রেটারি জন সরকার প্রমুখ।

ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল বলেন, ব্যাংকিং খাতের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয় বেশকিছু সার্কুলার জারি করেছে। এসব সার্কুলার যথাযথ পরিপালনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নজরদারি করা হয়। ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে। এতে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেয়া হয়েছে।

বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ব্যাংকিং খাতের নৈতিকতার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নৈতিকতা বজায় রাখতে পারলে ব্যাংকিং খাতের সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে। তিনি ব্যাংকের কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দেন।

বিআইবিএমের সাবেক চেয়ার প্রফেসর এস এ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং খাতে চাকরির জন্য লাইসেন্স ব্যবস্থার প্রবর্তন করলে অনেক সমস্যা দূর হয়ে যাবে। বিশেষ করে পেশাদারি সংক্রান্ত লাইসেন্স থাকলেও ব্যাংকিংয়ে নেই। ব্যাংকিং খাতে এখন বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন।

এসআই/জেডএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।