সূচকের বড় উল্লম্ফন, লেনদেনে ধাক্কা
দেশের শেয়ারবাজারে টানা দরপতনের মধ্যে বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সবকটি মূল্য সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। তবে দুই বাজারেই কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
বাজার পরিস্থিতি নিয়ে শীর্ষ ব্রোকারদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) বৈঠকে বসছে- এমন সংবাদের ভিত্তিতে বাজারে উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বিনিয়োগকারী মো. কামাল বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে হাউজে এসেই শুনি শীর্ষ ব্রোকারেজদের সঙ্গে আইসিবি আজ বৈঠক করবে। এতে বাজারে ক্রয়ের চাপ বাড়বে বলেও গুঞ্জন শোনা যায়। ফলে লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মূল্য সূচকও ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে।
মূল্য সূচকের বড় ঊত্থান হলেও দুশ্চিন্তা দূর হয়নি- এমন মন্তব্য করে এ বিনিয়োগকারী বলেন, টানা দরপতনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক প্রায় ৫ পয়েন্ট পড়ে গেছে। সুতরাং একদিনের বড় উত্থানে খুশি হওয়ার কিছু নেই। সামনের কয়েক কার্যদিবস কী হয় এখন সেটাই দেখার বিষয়।
শফিকুল ইসলাম নামের অপর বিনিয়োগকারী বলেন, গত কয়েকদিনে যে পরিমাণ পড়েছে তাতে বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়াটাই স্বাভাবিক। এখন একদিনে ১০০-১৫০ পয়েন্ট বাড়লেও আমার মতে অস্বাভাবিক কিছু নয়। সেখানে তো ৬০ পয়েন্টের কিছু বেড়েছে। তারপরও যেভাবে টানা দরপতন হয়েছে তাতে আতঙ্ক তো থাকবেই।
এদিকে মূল্য সূচক বাড়ার পরও লেনদেন কমার কারণ হিসেবে বিনিয়োগকারী আমিরুল ইসলাম বলেন, আইসিবির বৈঠকের খবর শুনে আজ অনেকেই শেয়ার ক্রয়ে মনোযোগী হন। কিন্তু টানা পতনের কারণে শেয়ারের দাম অনেক কমে গেছে। যে কারণে কিছুটা দাম বাড়ার পরও অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করেননি। ফলে বিক্রির থেকে ক্রয়ের চাপ বেশি থাকায় মূল্য সূচক বেড়েছে। অপরদিকে বিক্রির চাপ কম থাকায় লেনদেন কমেছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মূল্য সূচকের পাশাপাশি শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২০৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৪টির। আর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৪১টির।
মূল্য সূচক ও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দাম বৃদ্ধির পরও বাজারে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৭৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪৮৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের দিনের তুলনায় লেনদেন কমেছে ১৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬৮ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৪২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুটি মূল্য সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ২৬ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৫৯ পয়েন্টে।
টাকার অংকে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিংয়ের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজের ১৭ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৭ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিএসআরএম।
লেনদেনে এরপর রয়েছে- ব্র্যাক ব্যাংক, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, সিনো বাংলা, বেক্সিমকো ও নাহি অ্যালুমিনিয়াম।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএসসিএক্স ৮৬ পয়েন্ট বেড়ে ১০ হাজার ১৩২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া ২১৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৪টির। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টির।
এমএএস/এমএআর/জেআইএম