শসা-গাজরের সেঞ্চুরি
রোজার প্রভাবে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ১০০ টাকা ছুঁয়েছে শসা ও গাজরের কেজি। পাশাপাশি কিছুটা বেড়েছে মরিচের দাম। সেই সঙ্গে সব সবজিই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজির কেজি মিলছে না।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, মালিবাগ হাজীপাড়া, খিলগাঁও, সেগুনবাগিচা এবং শান্তিনগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
শসা ও গাজরের দাম বাড়ার আগে রাজধানীতে পেঁপে, বেগুন, চিচিঙ্গা ও ধুন্দলের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ে। তবে রোজার প্রথম দিনে-এ ৪টি সবজির দাম বাড়েনি।
শসা ও গাজরের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ইফতারিতে শসা ও গাজরের চাহিদা থাকে অনেক বেশি। বিশেষ করে মুড়ি মাখাতে শসার বিকল্প নেই। আর ইফতারিতে মুড়ি মাখানো খান না-এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজার ও মানভেদে শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০-১০০ টাকায়। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগেও সালাতের অন্যতম এই উপকরণ দু'টির কেজি ৫০ টাকার মধ্যে মিলেছে।
শান্তিনগর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা শসার কেজি বিক্রি করছেন ৯০-১০০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে সেগুনবাগিচা বাজারে। তবে রামপুরা ও খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ীরা এর থেকে একটু কম দামে বিক্রি করছেন। এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ৭০-৮০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন শসা।
শান্তিনগরের ব্যবসায়ী ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘আড়তে দাম চড়া, তাই আমাদেরও চড়া দামে শসা বিক্রি করতে হচ্ছে। আমরা কম দামে কিনতে পারলে ক্রেতাদের কম দামে দিতে পারব।’
সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কেমন বেড়েছে জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে শসা ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। এখন বিক্রি করছি ১০০ টাকা। সে হিসেবে শসার দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আর গাজর গত সপ্তাহে বিক্রি করেছি ৭০ টাকা, এখন ৯০ টাকা বিক্রি করছি।’
সেগুনবাগিচা বাজারে শসা কিনতে আসা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, রোজা চলে এসেছে, এখন তো সব জিনিসপত্রের দাম বাড়বেই। এই দেখেন এক সপ্তাহ আগে শসা ৫০ টাকা ও গাজর ৬০ টাকা কেজি কিনেছি। এখন এ দু'টি পণ্যের কেজি ১০০ টাকা হয়েছে।
এদিকে গত কয়েক সপ্তাহের মতো সবজি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে টমেটো, লাউ, চিচিঙ্গা, করলা, পটল, ঢেঁড়স, বরবটির সরবরাহ পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। তবে সব সবজির দাম চড়া। সবজির এ চড়া দামের ক্ষেত্রেও রোজাকে কারণ হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া চিচিঙ্গার দাম একই রয়েছে। বেগুন আগের মতো ৬০- ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁপে। কাকরোলের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে। গত দুই মাস ধরে বাজারে দামি সবজির তালিকায় থাকা ককরোল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি।
গত সপ্তাহে ৩৫-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পটলের দাম কিছুটা বেড়ে ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরিবর্তিত রয়েছে বরবটি ও ঢেঁড়স। এ দু’টি সবজি আগের সপ্তাহের মতো ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
তবে পাকা টমেটো ও করলার দাম নতুন করে কিছুটা বেড়েছে। ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া টমেটোর দাম বেড়ে হয়েছে ৬০-৭০ টাকা। করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৫-৫০ টাকা।
দামের এ উত্তাপ শাকেও লেগেছে। লাল শাক, সবুজ ডাটা শাক, পাট শাক, কলমি শাক বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকা আটি, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৫-১০ টাকা আটি। আর ২০-২৫ টাকা আটি বিক্রি হওয়া পুইশাক ও লাউ শাক বেড়ে হয়েছে ৩০-৩৫ টাকা।
কাঁচামরিচের দাম কিছুটা বেড়ে ১৫-২০ টাকা পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১০-১৫ টাকা পোয়া। দেশি পেঁয়াজ আগের সপ্তাহের মতো ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা কেজি।
রামপুরার ব্যবসায়ী বেলাল বলেন, ‘রোজা, রোজার কারণেই এখন সব ধরনের সবজির দাম কিছুটা বেশি। রোজা চলে গেলে হয়তো সব সবজির দাম কমে যাবে। শসা ও বেগুনের দাম রোজার পর অবশ্যই কমবে। তবে রোজার ভেতর এ দু'টি পণ্যের দাম কমার সম্ভাবনা নেই।’
এমএএস/এসআর/এমএস