রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণ : শক্ত মনিটরিংয়ের বিকল্প নেই

মামুন আব্দুল্লাহ মামুন আব্দুল্লাহ
প্রকাশিত: ০৯:৩৫ এএম, ১৮ মে ২০১৮

 

পবিত্র রমজানে বাজার পরিস্থিতি থাকে ঊর্ধ্বমুখী। রমজান আসলেই খরচ বেড়ে যায় সাধারণ মানুষের। এ নিয়ে প্রতি বছর সরকারের বিভিন্ন বিভাগ থেকে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়। অনেক সময় অভিযান চালানো হয়। কিন্ত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এই অবস্থায় ভোক্তারা জানিয়েছেন, বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়। জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন তারা। অনেকে প্রকাশ করেছেন ক্ষোভ।

ভোক্তারা বলেছেন, বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকার পেছনে বড় কারণ কতিপয় ব্যবসায়ীর অতি মুনাফার চিন্তা। এর বাইরে রয়েছে সিন্ডিকেট ও কারসাজি করে দাম বাড়ানোর প্রবণতা। এগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জানা থাকলেও তারা ব্যবস্থা নিতে প্রতিবছরই ব্যর্থ হয়ে আসছেন। এই ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর দায়িত্বশীলতা ও আন্তরিকতাও নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

এমতাবস্থায় বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন তারা। ভোক্তাদের পরামর্শগুলো সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো:

ঢাকায় কর্মরত বেসরকারি চাকরিজীবী সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে মনিটরিং। এজন্য যেটা করতে হবে-তা হলো বাজারে বাজারে ইন্টেলিজেন্স টিম পাঠানো। থাকতে হবে অস্থায়ী ক্যাম্প, যেন ভোক্তারা যে কোনো অভিযোগ জানাতে পারেন।

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ থাকে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানো হয়। এজন্য সরকারের সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) নিজেদের মজুদ বাড়াতে হবে। সংকট সৃষ্টির আগেই পণ্য বাজারে পাঠিয়ে দিতে হবে। প্রতি বছর খোলা বাজারে যা বিক্রি করা হয়, তা পর্যাপ্ত নয়।

রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আসলামুল আলম বলেন, ‘রমজান আসার আগেই সব সময় ‘বাজার গরম’ হয়। বাজারের পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ঘরে ফিরে গিন্নির হাতে বাজারের ব্যাগ ধরে দিলে শুনতে হয় গিন্নির চিৎকার-এটা আনোনি কেন, ওটা কই, এটা ছাড়া কি চলে, মসুর ডাল কই?-এভাবে তো চলতে পারে না।

তিনি বলেন, দেশে আইন আছে কিন্তু সেটা যথাযথভাবে প্রয়োগ হয় না। সেটা করতে হবে। এর বাইরে বাজারের নিয়ন্ত্রণ যেন মুষ্টিমেয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে না যায়, সেটা দেখতে হবে।’

মিরপুরের কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা সুমন বলেন, ‘রমজানে সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকে। সবগুলোর দাম খুব একটা বাড়ে না। তবে কিছু কাঁচামাল আছে-যা রমজান শুরুর আগেই বেড়ে যায়। সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে পারলে আশা করি রমজানের আগে ও পরে দাম একই থাকবে।

ধানমন্ডি-১৫ নম্বর কাঁচাবাজারের ক্রেতা সিদ্দিকুর বলেন, ‘দেশে রমজানের আগে বাজারদর স্বাভাবিক থাক। কিন্তু রমজানে কিছু কিছু পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে বলে দাম বেড়ে যায়। চিনি, ছোলা, ডাল ও বেসনের দাম রমজানে একটু বেশি ওঠানামা করে।’

তিনি বলেন, ‘এর দায় কিছুটা আমাদেরও রয়েছে। আমরা হুজুগে বাঙালি, একসঙ্গে এক মাসের বাজার করে রাখতে চায়। এর প্রভাব তো কিছুটা পড়বে- এটাই স্বাভাবিক। রমজান মাস সংযমের মাস, এটা মনে রাখতে হবে।

রাজধানীর একটি বেসরকারি কলেজ শিক্ষক সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘প্রতি বছর রমজানের আগে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য ক্ষণস্থায়ী উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে বাজারে শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশে পণ্যের চাহিদা এবং আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য সরকারের নিশ্চয় থাকা উচিত। তা না হলে আগাম ব্যবস্থা নেবে কীভাবে? কারণ, আগাম ব্যবস্থা নিয়ে নিশ্চিত করতে হবে চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য। সরকারের দক্ষ মার্কেট ইন্টেলিজেন্স থাকতে হবে।’

এমএ/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।