বাণিজ্য ঘাটতি ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা
দেশে আমদানি ব্যয় বাড়ছে। সে অনুযায়ী হচ্ছে না রফতানি আয়। পণ্য ও সেবা উভয়ের বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ। ফলে সামগ্রকি বাণিজ্য ঘাটতিতে একের পর এক রেকর্ড করছে দেশ। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) মোট বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩২০ কোটি ডলার বা এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০১৭-১৮) নবম মাস মার্চ শেষে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩২০ কোটি ২ লাখ ডলার, যা গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭৩০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৬১৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রফতানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় যতটুকু বেশি, তার পার্থক্যই বাণিজ্য ঘাটতি। দেশে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে। এসব বড় বড় প্রকল্পের ফলে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি বেড়েছে। এছাড়া শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে। এসব কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে।
তারা আরও বলেন, বাণিজ্যের এ ঘাটতি মেটানো হয় রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগ দিয়ে। তবে এ খাতেও নিম্নগতি রয়েছে। ফলে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট বা বিওপি) ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা বিদ্যমান থাকা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ভালো নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, মার্চ শেষে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে দুই হাজার ৭০৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানিতে ব্যয় হয়েছে চার হাজার ৩০ কোটি ডলার। বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে এক হাজার ৩২০ কোটি ডলার। যা বর্তমান বিনিময় হার (৮৪ টাকা) অনুযায়ী এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
এছাড়া আলোচিত সময়ে আমদানি বেড়েছে ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। রফতানি বেড়েছে ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অন্যদিকে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৬ দশমিক ৪২ শতাংশ। ফলে চলতি হিসাবে ঘাটতি বড় হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু গত কয়েক বছর উদ্বৃত্তের ধারা অব্যাহত থাকলেও গত অর্থবছরে ঋণাত্মক ধারায় চলে গেছে। ডিসেম্বরেও এ ধারা অব্যাহত রযেছে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল। এতে বৈদেশিক দায় পরিশোধে সরকারকে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১৪৮ কোটি ডলার ঋণাত্মক হয়। যা এখনো অব্যাহত রযেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মার্চ শেষে ৭০৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার ঋণাত্মক হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঋণাত্মক ছিল ১৩৭ কোটি ২০ লাখ ডলার।
আলোচিত সময়ে সেবাখাতে বিদেশিদের বেতনভাতা পরিশোধ করা হয়েছে ৬৫৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে মাত্র ৩২১ কোটি ২০ লাখ ডলার। এ হিসাবে ৯ মাসে সেবায় বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৩৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারে। যা গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
মার্চ শেষে দেশে বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) দেশে এসেছে মোট ২২৫ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৩৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। তবে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ সামান্য বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের আলোচিত মাসে নিট পোর্টফোলিও বিনিয়োগ হয়েছে ৩২ কোটি ডলার।
এসআই/আরএস/আরআইপি