বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবি’র ভূমিকা নিয়ে ‘প্রশ্ন’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:১০ পিএম, ১৬ মে ২০১৮

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ছোলার বার্ষিক চাহিদা এক লাখ টন। শুধু রমজান মাসেই এর চাহিদা দাঁড়ায় ৮০ হাজার টন। চাহিদার বিপরীতে রমজান উপলক্ষে কম দামে বিক্রির জন্য মাত্র দুই হাজার টন ছোলা আমদানি করেছে সরকারি বিপণন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), যা চাহিদার তুলনায় নগণ্য।

একই অবস্থা অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও। তাই ১৬ কোটি মানুষের এ বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবি কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত রোববার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ, বিপণন ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সার্বিকভাবে চাহিদার তুলনায় মজুদ অনেক বেশি রয়েছে। তাই রমজানের চাহিদাকে পুঁজি করে কেউ যাতে অস্বাভাবিকভাবে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে সে লক্ষ্যে বাজারের দিকে গোয়েন্দা সংস্থার তীক্ষ্ণ নজরদারি থাকবে। তবে এক্ষেত্রে টিসিবির অবদান যৎসামান্য।

ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বার্ষিক প্রায় ২০ হাজার টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে। শুধু রমজান মাসে এ চাহিদা দাঁড়ায় প্রায় ১৮ হাজার টন। চাহিদার বিপরীতে টিসিবি আমদানি করেছে মাত্র ১০০ টন।

প্রতিবেদনে টিসিবি কর্তৃক ভোজ্যতেল, চিনি ও ডাল আমদানির তথ্য দেয়া হয়নি। তবে সূত্রে জানা গেছে, টিসিবি এসব পণ্যও আমদানি করেছে যৎসামান্য। এ অল্প সংখ্যক পণ্য নিয়েই পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে গত ৬ মে থেকে সারা দেশে পণ্য বিক্রি শুরু করে টিসিবি। সংস্থাটির বিক্রয়কেন্দ্র, পরিবেশক ও ভ্রাম্যমাণ ট্রাক থেকে ক্রেতারা বাজারদরের চেয়ে বেশ কম মূল্যে পণ্য কিনতে পারছেন।

এবার একজন ভোক্তাকে ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ চার কেজি চিনি, ৫৫ টাকা দরে সর্বোচ্চ চার কেজি মসুর ডাল (মাঝারি আকার), প্রতি লিটার ৮৫ টাকা দরে সর্বোচ্চ পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল, প্রতি কেজি ৭০ টাকা দরে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি ছোলা এবং প্রতি কেজি ১২০ টাকা দরে সর্বোচ্চ এক কেজি খেজুর দেয়া হচ্ছে। ১৮৪টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে দেশব্যাপী এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৩২টি ট্রাক, চট্টগ্রামে ১০টি এবং অন্যান্য বিভাগীয় শহরে পাঁচটি ও জেলা সদরে দুটি করে ট্রাকে পণ্য বিক্রি হচ্ছে।

ঢাকা শহরের যেসব স্থানে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাক রয়েছে সে স্থানগুলো হলো- সচিবালয় গেট, প্রেস ক্লাব, কাপ্তান বাজার, ভিক্টোরিয়া পার্ক, সাইন্সল্যাব মোড়, নিউমার্কেট তথা নীলক্ষেত মোড়, শ্যামলী অথবা কল্যাণপুর, জিগাতলা মোড়, খামার বাড়ি, কলমীতলা বাজার, কচুক্ষেতের রাজনীগন্ধা সুপার মার্কেটের সামনে, আগারগাঁও তালতলা ও নির্বাচন কমিশন অফিস, রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স উত্তরা, মিরপুর-১নং মাজার রোড, শান্তিনগর বাজার, মালিবাগ বাজার, বাসাবো বাজার, বনশ্রীর আইডিয়াল স্কুল, বাংলাদেশ ব্যাংক চত্বর, মহাখালী কাঁচাবাজার, শেওড়াপাড়া বাজার, দৈনিক বাংলা মোড়, শাহজাহানপুর বাজার, জকিরাপুল বাজার ও আইডিয়াল জোন, মতিঝিল বকচত্বর, খিলগাঁও তালতলা বাজার, রামপুরা বাজার, মিরপুর-১০ গোলচত্বর, আশকোনা হাজি ক্যাম্প, মোহাম্মদপুর টাউনহল কাঁচাবাজার, দিলকুশা ও মাদারটেক নন্দীপাড়া কৃষি ব্যাংকের সামনে। এছাড়া টিসিবির দুই হাজার ৭৮৪ ডিলার এবং নিজস্ব ১০টি খুচরা বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি চলছে।

সার্বিক কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবি’র মুখপাত্র মো. হুমায়ুন কবির জাগো নিউজকে বলেন, এসব পণ্য ছাড়াও আমাদের গোডাউনে আপদকালীন কিছু মজুদ থাকে। কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য টিসিবি’র অনুকূলে বাজেটে কিছু অর্থ বরাদ্দ রাখার আবেদন করা হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

বাজারে পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে টিসিবির ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজার সহনশীল রাখার জন্য টিসিবি শুধু একা কাজ করে না। এর সঙ্গে আরও আছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল, ট্যারিফ কমিশন, ভোক্তা অধিকার ও সিটি কর্পোরেশনের সমন্বিত কাজ। টিসিবির কাজ হচ্ছে ডিলারদের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করা। টিসিবি সেটা করছে।

এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবি ক্রমশই গুরুত্ব হারাতে বসেছে। বিদ্যমান বাজার ব্যবস্থা এখন অনেক বড়। এ বাজার চাহিদায় সীমিত মজুদ দিয়ে কিছুই হবে না।

তিনি আরও বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে টিসিবির একটা নিজস্ব মূলধন থাকা দরকার। এ মূলধন পেলে টিসিবি স্বাধীনভাবে পণ্য ক্রয় এবং ভোক্তাপর্যায়ে বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হবে।

এমইউএইচ/ওআর/এমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।