নির্বাচন সামনে রেখে পর্যাপ্ত বরাদ্দে এডিপির অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫০ পিএম, ১০ মে ২০১৮

* এডিপির আকার ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা

* সর্বোচ্চ বরাদ্দ পরিবহন খাতে

* মোট প্রকল্প ১ হাজার ৪৫২টি

নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী (২০১৮-১৯) অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) পরিবহনসহ মেগা প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে বরাদ্দের আকার। এবারের এডিপির আকার ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। সূত্র বলছে, নির্বাচনের আগে অর্থ সংকটের কারণে এসব প্রকল্পে যেন কোনো প্রকার বাধা না আসে এ জন্য এবার পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এনইসি চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মোট এডিপির মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে ৭ হাজার ৮৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা খরচের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এনইসি বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।

মেগা প্রকল্পে অগ্রাধিকার

এডিপির বরাদ্দ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট বরাদ্দের ২৬ দশমিক ২৭ শতাংশ দেয়া হয়েছে পরিবহন খাতে। এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৫ হাজার ৪৪৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৫ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা থাকছে পদ্মা রেল লিংক প্রকেল্পের জন্য। আর পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প পাচ্ছে ৪ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য ৩ হাজার ৯০২ কোটি টাকা, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পে ১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা এবং দোহাজারি-রামু-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথ প্রকল্পে ১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, এখন নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মৌলিক সংস্কার আনা হবে। আগামী অর্থবছর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পদ্মা সেতু এবং পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পরিবহন খাতে। এ ছাড়া অগ্রাধিকার বিবেচনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ বিদ্যুৎ এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ভৌত পরিকল্পনা-পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে।

খাতভিত্তিক বরাদ্দ

আগামী অর্থবছরের জন্য ১৭টি খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি খাতে বরাদ্দের বর্ণণা দেয়া হলো। পরিবহন খাতে ৪৫ হাজার ৪৪৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ২৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ খাতে ২২ হাজার ৯৩০ কোটি ২০ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ ভৌত-পরিকল্পনা-পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে ১৭ হাজার ৮৮৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

এ ছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনয়ন এবং অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য চতুর্থ সর্বোচ্চ পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ১৬ হাজার ৬৯০ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। শিক্ষার প্রসার ও গুণগতমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষা ও ধর্ম খাতে পঞ্চম সর্বোচ্চ বরাদ্দ ১৬ হাজার ৬২০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণসহ তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতে ১৪ হাজার ২১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, অর্থাৎ ৮ দশমিক ২১ শতাংশ।

স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য-পুষ্টি-জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে বরাদ্দ ১১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ। খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে কৃষি খাতে বরাদ্দ ৭ হাজার ৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকা, যা ৪ দশমিক শ্যন্য ৯ শতাংশ। নদী ভাঙন রোধ ও নদী ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে পানি সম্পদ সেক্টরে বরাদ্দ ৪ হাজার ৫৯২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, যা ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। মানবসম্পদ উন্নয়নসহ দক্ষতা বৃদ্ধিতে গতিশীলতা আনয়নে জনপ্রশাসন খাতে বরাদ্দ ৩ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ

মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুকূলে ২৩ হাজার ৪৩৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ বিদ্যুৎ বিভাগের অনুকূলে ২২ হাজার ৮৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অনুকূলে ২০ হাজার ৮১৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এরপর পর্যায়ক্রমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১১ হাজার ৭২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১১ হাজার ১৫৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা, সেতু বিভাগে ৯ হাজার ১১২ কোটি ১৫ লাখ টাকা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে ৯ হাজার ৪০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৮ হাজার ৩১২ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে ৬ হাজার ৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দ করা হয়েছে ৫ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা।

প্রকল্প সংখ্যা

আগামী অর্থবছরের এডিপিতে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানেরসহ মোট ১ হাজার ৪৫২টি প্রকল্প যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে বরাদ্দসহ অনুমোদিত প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ৩৪৬টি। (বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ২২৭টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১১৭টি এবং জেডিসিএফ প্রকল্প ২টি)। এ ছাড়া এসব প্রকল্পের মধ্যে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি থেকে স্থানান্তরিত হচ্ছে ১ হাজার ২৩৪টি প্রকল্প। আর একেবারেই নতুন অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ১১২টি। তবে এগুলোর বাইরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িতব্য প্রকল্প থাকছে ১০৫টি। আর বরাদ্দহীনভাবে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় থাকছে ১ হাজার ৩৩৮টি। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) বাস্তবায়নের জন্য রেকর্ড ৭৮টি প্রকল্প যুক্ত হয়েছে আগামী এডিপিতে। বাস্তবায়ন শেষ হবে এরকম ৪৪৬টি প্রকল্পের তালিকা যুক্ত করা হয়েছে এ এডিপিতে। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে ৪৩০টি এবং কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৬টি।

এমএ/জেডএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।