আস্থাহীনতায় শেয়ারবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৪৭ পিএম, ০৮ মে ২০১৮

তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলো থেকে বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশিত লভ্যাংশ না পাওয়ায় শেয়ারবাজারের এক ধরনের আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রভাবে বাজারে দেখা দিয়েছে তারল্য সঙ্কটও। ফলে টানা দরপতন দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, চীনের দুই প্রতিষ্ঠান শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে পাওয়া দেশের শেয়ারবাজারের বিরাট সুখবর। গত সপ্তাহেই এ সুখরবটি এসেছে। এর আগে ব্যাংকের তারল্য বাড়াতে সরকার থেকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে।

এমন দু’টি সু-সংবাদের কোনো ইতিবাচক প্রভাব বাজারে দেখা যাচ্ছে না। বরং দিনের পর দিন দরপতন হচ্ছে। এ দরপতনের মূল কারণ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশিত লভ্যাংশ পায়নি। ব্যাংক কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণার হার কমে গেছে। এমন কি কিছু কোম্পানি নগদ লভ্যাংশের পরিবর্তে আশঙ্কাজনক হারে বোনাস শেয়ার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এরই নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে বাজারে।

মঙ্গলবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএস্ই) সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা পাঁচ কার্যদিবস পতনের মধ্যে থাকলো শেয়ারবাজার।

মূল্যসূচকের পাশাপাশি এদিন প্রধান বাজার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও। বাজারটিতে ৮৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২২৩টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টির দাম।

মঙ্গলবার ডিএসইতে মোট ৪৭২ কোটি ৯৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয় ৪৯০ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার। সে হিসাবে আগের দিনের তুলনায় লেনদেন কমেছে ১৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪১ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬৪২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই মূল্যসূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ১৮ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৯৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০৫ পয়েন্টে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাজারে যে টানা দরপতন দেখা দিয়েছে তার মূল কারণ কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশিত লভ্যাংশ দিতে পারেনি। বিশেষ করে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলো ভালো লভ্যাংশ দেয়নি। ফলে বাজারে এক ধরনের তারল্য সঙ্কটও দেখা দিয়েছে। যে কারণে চীনা কনসোর্টিয়ামের কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার সুখবরের প্রভাব বাজারে দেখা যাচ্ছে না’।

ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, ‘এবার ব্যাংকগুলো অত্যন্ত বাজে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে বোনাস শেয়ার দেয়ার এক ধরনের হিড়িক পড়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, ব্যাংকগুলো মারাত্মক সঙ্কটে রয়েছে। এরই নেতিবাচক প্রভাব বাজারে দেখা যাচ্ছে’।

মঙ্গলবার টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির মোট ২৮ কোটি ১২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ১৬ লাখ টাকার। ১৮ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন।

লেনদেনে এরপর রয়েছে- গ্রামীণ ফোন, নাভানা সিএনজি, সিটি ব্যাংক, মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এবং বিবিএস কেবলস।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএসসিএক্স ৮৮ পয়েন্ট কমে ১০ হাজার ৫২৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার। লেনদেন হওয়া ২৩২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪১টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩১টির দাম।

এমএএস/এমএমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।