মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহী থাইল্যান্ড
বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে থাইল্যান্ড। বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে ঢাকায় সফররত থাইল্যান্ডের ইনভেস্টমেন্ট এন্ড ইকোনমিক রিফর্মস বিষয়কমন্ত্রী মি. কোবসক পুট্রকলের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে এ আগ্রহের কথা জনানো হয়েছে। বৈঠকে কোবসক পুট্রকল বলেন, দুই দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধিতে উভয় দেশই এফটিএ চুক্তিতে আগ্রহী। এ জন্য টেকনিক্যাল কমিটি কাজ করছে। থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে আরও বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করতে চায় বলেও জানান তিনি। কোন কোন খাতে তারা বিনিয়োগ করতে চায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যোগাযোগ, পাওয়ার, হসপিটালসহ আরও কিছু সেক্টরে তারা বিনিয়োগে আগ্রহী।
বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, থাইল্যান্ড আমাদের বন্ধু দেশ। কিন্তু বর্তমানে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ভলো নয়। আমরা এ বাণিজ্যের পরিমাণ আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চাই। তিনি বলেন, বর্তমানে থাইল্যান্ড বাংলাদেশকে বেশকিছু পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়। তবে আমরা তৈরি পোশাকসহ আরও যেসব পণ্য রপ্তানি করি সেসব পণ্যে এ সুবিধা চাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে থাইল্যান্ডের ১০০টি প্রকল্পে প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোনে থাইল্যান্ড বিনিয়োগ করলে একটি স্পেশাল ইকোনমিক জোন বরাদ্দ দেয়া হবে। এ জন্য সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প নগরীতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করলে রপ্তানি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত নগদ আর্থিক সহায়তার সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সঙ্গে এফটিএ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এ মহূর্তে থাইল্যান্ড বাংলাদেশকে ৬,৯৯৮টি পণ্য রপ্তানি ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করছে। গত অর্থ বছরে বাংলাদেশ থাইল্যান্ডে ৪৮.৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, একই সময়ে আমদানি করেছে ৭৮১.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ওষুধসহ যেসব পণ্য থাইল্যান্ডে প্রচুর চাহিদা রয়েছে এমন আরও ৩৬টি পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়েছে এবং থাইল্যান্ড ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভিসা সহজ করার জন্য থাইল্যান্ডের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী ২০২১ সালে উভয় দেশের বাণিজ্য ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, থাইল্যান্ড বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাষ্ট্র। ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে উভয় দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি করা সম্ভব। গত বছর বাংলাদেশে ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ছিল। এ বছর আরও বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বমানের ওষুধ প্রস্তুত করছে। বাণিজ্য সুবিধা পাওয়া গেলে থাইল্যান্ডে ওষুধ রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২০২১ সালে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শুভাশীস বসু, বাংলাদেশে নিযুক্ত থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত বেনোয়েট প্রিফনটেইন, থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিসেস সাঈদা মুনা তাসনিম, থাইল্যান্ডের ডেলিগেশন সদস্যবৃন্দ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এমইউএইজ/ওআর/জেআইএম