কৌশলগত বিনিয়োগকারী : আজ আবার প্রস্তাব দেবে ডিএসই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:১০ এএম, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

চীনের দুই প্রতিষ্ঠান শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করতে আজ সোমবার আবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রস্তাব পাঠাবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

দুপুরে রাজধানীর হোটেল পূর্বানীতে অতিরিক্ত সাধারণ সভা (ইজিএম) করে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির অনুমোদন পেতে এ প্রস্তাব পাঠানো হবে।

এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের বোর্ড সভায় চীনা এই কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বেছে নেয়া হয়। আর ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে চীনের কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে অনুমোদনের জন্য বিএসইসিতে প্রস্তাব জমা দেয় ডিএসই।

ওই দিনই (২২ ফেব্রুয়ারি) ডিএসইর প্রস্তাব পর্যালোচনা করতে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কমিটির সদস্য সচিব করা হয় নির্বাহী পরিচালক মো. মাহবুবুল আলমকে। কমিটির ওই অন্য দুই সদস্য হলেন নির্বাহী পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান ও মো. আনোয়ারুল ইসলাম।

এই কমিটির পর্যালোচনায় উঠে আসে, চীনা কনসোর্টিয়াম যে প্রস্তাব দিয়েছে তার মধ্যে কিছু বিষয় বাংলাদেশের আইনের পরিপন্থি। ফলে সেই প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করার সুযোগ নেই বলে অভিমত তুলে ধরা হয়। তারই আলোকে বিএসইসি ডিএসইর কাছে ব্যাখ্যাও চায়।

কমিটির পর্যালোচনায় উঠে আসে, ডিএসইর সঙ্গে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর চুক্তি যুক্তরাজ্যের (ইউনাইটেড কিংডম) আইন অনুযায়ী করার শর্ত দিয়েছে চীনের কনসোর্টিয়াম। সেই সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে কোন বিরোধ দেখা দিলে তার সমঝোত লন্ডনের আন্তর্জাতিক আরবিটেশ অনুযায়ী করার শর্ত দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন কোন কৌশলগত বিনিয়োগকারী অন্তর্ভুক্ত করতে চীনের কনসোর্টিয়ামের অনুমোদনও নিতে হবে, এমন শর্তও দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির কমিটি অভিমত ছিল, এই তিনটি শর্তই বাংলাদেশের আইনের পরিপন্থি এবং তা বিবেচনার সুযোগ নেই। এছাড়া আর্টিকেলে প্রস্তাবিত ধারাগুলো সংযোজন করলে ডিএসই চাইনিজ কৌশলগত বিনিয়োগকারীর অনুমোদন ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে না।

চীনের কনসোর্টিয়ামের অন্য শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- নতুন কোনো শেয়ার ইস্যু, পরিচালকদের সংখ্যা পরিবর্তন, ১৫ শতাংশের বেশি যে কোনো স্থায়ী সম্পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, একক বা যৌথভাবে ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণ গ্রহণ, ১০ কোটি টাকার ওপরে যে কোনো চুক্তি, ১০ কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ করতে চীনের কনসোর্টিয়ামের লিখিত অনুমোদন নিতে হবে।

পাশাপাশি ডিএসইর আইপিও সংক্রান্ত যে কোনো ইস্যু যেমন শেয়ারের মূল্য, স্পন্সর নির্ধারণ, অবলেখক নিয়োগ, প্রসপ্রেক্টাস অনুমোদন এবং ইস্যু মূল্য নির্ধারণেও চীনের কনসোর্টিয়ামের লিখিত অনুমোদন লাগবে, এমন শর্তও জুড়ে দিয়েছে চীনের কনসোর্টিয়াম।

ডিএসইর আর্টিকেলের ১৩৫-এ একটি নিয়ন্ত্রণমূলক ধারা রয়েছে, ফলে ডিএসই যে কোনো শেয়ারধারী যার ন্যূনতম দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে, তার সঙ্গে কোন চুক্তি করতে পারবে না। চাইনিজ কৌশলগত বিনয়োগকারী এই ধারা থেকে অব্যাহতি চেয়েছে। বিএসইসির কমিটির পর্যালোচনায় এমন তথ্যও উঠে আসে।

একই সঙ্গে আর্টিকেলে যাই থাক না কেন চাইনিজ কৌশলগত বিনিয়োগকারী তার ইচ্ছা অনুযায়ী যে কাউকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগদানের প্রস্তাব দিয়েছে এবং সেটেলমেন্ট গ্রান্টি ফান্ড কনটিবিউশন বাদ দেয়া বা স্থগিত করার প্রস্তাব দিয়েছে। এ বিষয়েও ডিএসইর কাছে ব্যাখ্যা চায় বিএসইসি।

এদিকে চীনের কনসোর্টিয়াম যে ৩০০ কোটি টাকার কারিগরি সহায়তা দেবে বলে ডিএসই দাবি করছে, তা নির্ধারণে কোন নিরপেক্ষ মূল্যায়ন নেই বলে বিএসইসির পর্যালোচনা কমিটির তদন্তে উঠে আসে।

এসব তথ্য তুলে ধরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হলে ডিএসইর পক্ষ থেকে উপযুক্ত ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি বলে পরবর্তীতে কমিটির পর্যালোচনায় উঠে আসে। কমিটি অভিমত দেয়, কৌশলগত বিনিয়োগকারী ইস্যুতে চীনের কনসোর্টিয়ামের স্বার্থ রক্ষার্থে ডিএসই কর্তৃপক্ষ স্বপ্রোণোদিত হয়ে অনেক শর্ত দিয়েছে।

এছাড়া কৌশলগত বিনিয়োগকারী ইস্যুতে বিএসইসি ব্যাখ্যা চাইলেও ডিএসই কর্তৃপক্ষ তা করেনি বরং বিষয়গুলো এড়িয়ে গেছে। এক্ষেত্রে ডিএসই ২৫ শতাংশ শেয়ারধারীর স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে স্থানীয় ৭৫ শতাংশ শেয়ারহোল্ডারের স্বার্থ বিসর্জন কোন দিতে চেয়েছে তা জানতে চায় বিএসইসি।

বিএসইসির পর্যালোচনা কমিটির মতে, চীনের কনসোর্টিয়াম ২২ টাকা করে দেবে বলে ডিএসই সর্বত্র প্রকাশ করেছে। তবে লভ্যাংশ দিলে সমপরিমাণ মূল্য কমে যাবে বলে প্রস্তাবিত ডকুমেন্টে বলা হয়েছে। এমতাবস্থায় শেয়ারের দাম ২২ টাকা কি করে থাকে তা জানতে চায় বিএসইসি। একইসঙ্গে বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডাররা বিষয়টি জানে কিনা তাও জানতে চায়।

বিএসইসির চিঠির জবাবে ডিএসই দাবি করে, চীনের কনসোর্টিয়ামের সব প্রস্তাব আইনসম্মত। তবে এতগুলো বিরোধপূর্ণ শর্ত থাকার পরেও কিভাবে আইনসম্মত তা জানতে চায় বিএসইসি। এদিকে বিএসইসির চিঠির আলোকে ডিএসই কৌশলগত বিনিয়োগকারীর চুক্তি যুক্তরাজ্যের (ইউনাইটেড কিংডম) পরিবর্তে বাংলাদেশের আইনে করবে বলে জানায়।

ডিএসইর এমন ব্যাখ্যা সন্তুষ্ট করতে পারেনি বিএসইসিকে। ফলে ওই সময় চীনের কনসোটিয়ামের প্রস্তাব গ্রহণ করেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তবে কিছু শর্ত পরিপালন ও সংশোধিত প্রস্তাব দাখিল করার জন্য ডিএসইকে সুযোগ দেয়া হয়।

শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- শেয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্টে (এসপিএ) এমন কোনো শর্ত রাখা যাবে না, যা স্থানীয় আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পাশাপাশি ডিএসইর সাধারণ শেয়ারহোল্ডার ও বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট উন্নয়নের বিরুদ্ধে না যায়। এমন কোনো প্রস্তাব রাখা চলবে না, যা পরিপালন করতে ডিএসইর বিদ্যমান মেমোরেন্ডাম এবং আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন সংশোধন করতে হয়। এসপিএ-সহ কৌশলগত ইস্যু চূড়ান্ত করে কমিশনে জমা দেয়ার আগে ডিএসইর শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিতে হবে। কৌশলগত বিনিয়োগকারী ইস্যুতে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন ডিএসইর সাধারণ সভায় উপস্থাপন করতে হবে। ডিএসইর সাধারণ সভার সিদ্ধান্তপত্র, এসপিএ-সহ কনসোর্টিয়ামের অন্যান্য কাগজাদি নিয়ে কমিশনে চূড়ান্ত আবেদন করতে হবে। এরই প্রেক্ষিতে চীনা কনসোর্টিয়ামের আগের প্রস্তাবে কিছু সাধারণ সংশোধনী এনে বিএসইসির অনুমোদন পেতে আবার প্রস্তাব পাঠাচ্ছে ডিএসই।

এদিকে চীনা কনসোর্টিয়ামটির প্রস্তাব বিএসইসির যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় থাকা অবস্থায় গত ৮ মার্চ কৌশলগত বিনিয়োগকারী চূড়ান্ত করতে সময় চেয়ে আবেদন করে ডিএসই। ওই আবেদনের ডিএসইকে তিন মাস সময় দেয় বিএসইসি। নতুন নির্ধারিত সময় অনুযায়ী চলতি বছরের ৮ জুনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী চূড়ান্ত করতে হবে। এর আগে ডিএসইকে কৌশলগত বনিয়োগকারী চূড়ান্ত করতে চলতি বছরের ৮ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল।

ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিমের শর্ত অনুযায়ী, ব্লকড হিসেবে থাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ৬০ শতাংশ শেয়ার কৌশলগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জের মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ (সংরক্ষিত শেয়ার থেকে) কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে এবং বাকি ৩৫ শতাংশ শেয়ার আইপিও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রি করতে হবে। অন্যদিকে ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিক স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য বা ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান।

স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনে ২০১৬ সালের মধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে স্টক এক্সচেঞ্জের সংরক্ষিত ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই’র বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু ডিএসই এবং সিএসই ওই সময়ের মধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়। ফলে স্টক এক্সচেঞ্জের আবেদনের প্রেক্ষিতে ছয় মাস সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু সে দফাতেও ব্যর্থ হয় উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ। এরপর আরও কয়েক দফা সময় বাড়ায় বিএসইসি।

এমএএস/জেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।