যে কারণে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন
* মুনাফা উঠিয়ে নেয়া
* রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা
* নির্বাচনের বছর
চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস থেকেই দেশের শেয়ারবাজারে টানা দরপতন চলছে। আগের দুই কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এ নিয়ে টানা তিন কার্যদিবস দরপতনের মধ্যে থাকলো শেয়ারবাজার।
টানা এই দরপতন ঘটলেও তা স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি শেয়ারবাজারে দরপতন দেখা দিয়েছে তা সাধারণ প্রফিট টেকিং বা মুনাফা উঠিয়ে নেয়ায়। এতে বিনিয়োগকারীদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
এই দরপতনের বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ও লংকাবাংলা ক্যাপিটাল মার্কেট অপারেশন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, এটা স্বাভাবিক দরপতন। এখানে আমরা অস্বাভাবিক কিছু দেখছি না। বাজার উঠবে, পড়বে এটাই নিয়ম।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি ও ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহমেদ সাদেক জাগো নিউজকে বলেন, এখন বাজারে যে টানা দরপতন দেখা দিয়েছে তার পেছনে কয়েকটি কারণ আছে। একটি কারণ হলো-বিনিয়োগকারীরা প্রফিট টেকিং করছে। আর একটি কারণ হলো সামনে টানা ছুটি আছে। এ জন্যও কেউ কেউ শেয়ার বিক্রি করছেন। তবে বিনিয়োগকারীদের এই দরপতনে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটি স্বাভাবিক দরপতন।
তবে বিএমবিএ ও ডিবিএর এই দুই নেতার সঙ্গে একমত নন ডিএসইর সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এখন বাজারে যে দরপতন হচ্ছে এর পেছনে ‘রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এটি নির্বাচনের বছর, সুতরাং এক ধরনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা রয়েছে। এ কারণে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত শেয়ারবাজারে উত্থান-পতন একটু বেশিই হবে। এর সঙ্গে ব্যাংকের সুদহার না কমা এবং ব্যাংক খাতের ওপর আস্থাহীনতাও রয়েছে। এসব কারণেই টানা উত্থানের পর এখন টানা দরপতন দেখা যাচ্ছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মঙ্গলবার মূল্যসূচকের পাশাপাশি লেনদেন হওয়া সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৮৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২০৯টির। আর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫টির।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৮ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৭৭৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুটি মূল্যসূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৬৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৩৯ পয়েন্টে।
সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমলেও এদিন ডিএসইতে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৯৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪৮৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের দিনের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
এদিন টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয় গ্রামীণ ফোনের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশনের ২৬ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো।
লেনদেনে এরপর রয়েছে- ব্র্যাক ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, কেয়া কসমেটিক, স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যাল, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট, মুন্নু সিরামিক এবং কুইন সাউথ টেক্সটাইল।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএসসিএক্স ৮ পয়েন্ট কমে ১০ হাজার ৭৬৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩২ কোটি ২ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া ২৩৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৮টির। আর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৪০টির।
এমএএস/জেডএ/পিআর