সাধারণ বীমার ৯০ শতাংশ দাবি বকেয়া

সাঈদ শিপন
সাঈদ শিপন সাঈদ শিপন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৩৭ এএম, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

উত্থাপিত বীমা দাবির ৯০ শতাংশই পরিশোধ করছে না দেশে ব্যবসা করা সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিগুলোর তৈরি প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বর্তমানে দেশে ব্যবসা করছে ৪৬টি সাধারণ বীমা কোম্পানি। এর মধ্যে ৩৭টি কোম্পানির বীমা দাবি উত্থাপন ও পরিশোধ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেছে। ডিসেম্বর মাসে এ কোম্পানিগুলোতে প্রক্রিয়াধীন থাকা ৯১ শতাংশ বীমা দাবিই পরিশোধ হয়নি।

শুধু ডিসেম্বর নয়, মাসের পর মাস ধরে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোতে দাবি পরিশোধের ক্ষেত্রে এমন চিত্র বিরাজ করছে। নভেম্বর মাসে অপরিশোধিত দাবির হার ছিল ৯৭ শতাংশ। তার আগের মাস অক্টোবরে এ হার ছিল ৯৩ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে ৯০ শতাংশ। এভাবে প্রতি মাসেই ৯০ শতাংশের ওপরে বীমা দাবি অপরিশোধিত থেকে যাচ্ছে সাধারণ বীমা খাতে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বীমা দাবি উত্থাপনের পরও ডিসেম্বর মাস শেষে দাবির অর্থ পাননি এমন গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৬১৬ জন। মাসটিতে বিভিন্ন কোম্পানিতে প্রক্রিয়াধীন বীমা দাবির সংখ্যা ছিল নয় হাজর ৪২৯। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসে বীমা দাবির অর্থ পেতে আবেদন করেন এক হাজার ৯৮২ জন। বাকি আট হাজার ৫৩০ গ্রাহক ডিসেম্বর মাসের আগেই আবেদন করেন। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসে দাবির অর্থ পেয়েছেন এক হাজার ৮৮৯ জন।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সব থেকে বেশি বীমা দাবি অপরিশোধিত রয়েছে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সে। এই কোম্পানিতে ডিসেম্বর শেষে অপরিশোধিত বীমা দাবির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১৭০টি। ওই মাসে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স ৬১১ গ্রাহকের দাবির অর্থ পরিশোধ করে। তবে এ সময় কোম্পানিতে প্রক্রিয়াধীন দাবির সংখ্যা ছিল এক হাজার ৭৮১টি। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসে নতুন উত্থাপিত দাবির সংখ্যা ৫৭৯টি। বাকি এক হাজার ২০২টি দাবি ডিসেম্বর মাসের আগেই উত্থাপিত। 

দ্বিতীয় স্থানে থাকা গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সে অপরিশোধিত বীমা দাবির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৩৫টি। ডিসেম্বর মাসে কোম্পানিটি বীমা দাবি পরিশোধ করে ২১২ গ্রাহকের। তবে দাবির অর্থ চেয়ে আবেদন করা গ্রাহকের সংখ্যা ছিল এক হাজার ১৪৭ জন। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসে নতুন আবেদন করেন ২৯২ জন। বাকি ৮৫৫ জন গ্রাহক ডিসেম্বর মাসের আগেই দাবির অর্থ চেয়ে কোম্পানিতে আবেদন করেন।

তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটি ৬৮৪ গ্রাহকের দাবির অর্থ পরিশোধ করেনি। ডিসেম্বর মাসে কোম্পানিটি বীমা দাবির অর্থ দিয়েছে ৩৭ জনকে। অথচ দাবির অর্থ পেতে আবেদন করা গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ৭২১ জন। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসে আবেদন করেন ৫৩ জন এবং বাকি ৬৬৮ গ্রাহক ডিসেম্বর মাসের আগেই বীমা দাবির অর্থ চেয়ে আবেদন করেন।

কোম্পানির নাম

নভেম্বর মাসে অপরিশোধিত বীমা দাবি

ডিসেম্বর মাসে উত্থাপিত নতুন বীমা দাবি

মোট উত্থাপিত বীমা দাবি

পরিশোধ করা বীমা দাবির সংখ্যা

অপরিশোধিত বীমা দাবির সংখ্যা

অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স

৯৩

১২

১০৫

৯৯

এশিয়া ইন্স্যুরেন্স

৪১

১২

৫৩

২৪

২৯

এশিয়া প্যাসিফিক

১০২

২২

১২৪

৪৬

৭৮

বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স

৬৬৮

৫৩

৭২১

৩৭

৬৮৪

বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স

৩৭৪

৩৮

৪১২

৪৯

৩৬৩

সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স

৫৮

১৬

৭৪

৬৮

সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স

৯৭

১০

১০৭

১০০

কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স

২৫৩

১৮

২৭১

১৬

২৫৫

ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স

৫৫

১০

৬৫

১১

৬৪

দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স

২৫

২৭

২২

ঢাকা ইন্স্যুরেন্স

২৩

২৬

২৬

ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স

১৭১

৩২

২০৩

৪০

১৬৩

এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স

১১৮

৩৫

১৫৩

১৮

১৩৫

ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স

২৭৫

৫৩

৩২৮

৪৪

২৮৪

গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স

৮০

৮৭

৭৮

গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স

৮৫৫

২৯২

১,১৪৭

২১২

৯৩৫

ইসলামী কমার্শিয়াল

২৫৫

৪০

২৯৫

৩৪

২৬১

ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ

১৭৪

২৩

১৯৭

১৭

১৮০

জনতা ইন্স্যুরেন্স

৭৫

১৪

৮৯

২২

৬৭

মেঘনা ইন্স্যুরেন্স

২১৯

৩২

২৫১

১২

২৩৯

মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স

৩৫

৪১

৩৩

নিটল ইন্স্যুরেন্স

৪২২

২১৩

৬৩৫

১৯৬

৪৩৯

নর্দার্ন জেনারেল ইন্স্যুরেন্স

২৩২

৪১

২৭৩

৫৪

২১৯

প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স

২৮

৩৫

৩১

পিপলস্ ইন্স্যুরেন্স

৩৭৮

৪৪

৪২২

৩৪

৩৮৮

ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স

৩৫৪

২২

৩৭৬

২৯

৩৪৭

প্রগতি ইন্স্যুরেন্স

৪৫৬

১১২

৫৬৮

১১৮

৪৫০

প্রাইম  ইন্স্যুরেন্স

২৪৮

৪৮

৩২

৮৯

২০৭

প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স

৯৮

১৫

১১৩

১১

১০২

রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স

১,২০২

৫৭৯

১,৭৮১

৬১১

১১৭০

রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স

১৩২

১২

১৪৪

১০

১২২

রূপালী ইন্স্যুরেন্স

২৮৩

৫৫

৩৩৮

৩৩

৩০৫

সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স

৫০

৫৪

৫২

সিকদার ইন্স্যুরেন্স

১৬

১৯

১৬

সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স

৬৭

৬৬

তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স

১০৩

১১

১১৪

১০

১০৪

ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স

৪১৫

৮১

৪৯৬

৬১

৪৩৫

যোগাযোগ করা হলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য গোকুল চাঁদ দাস জাগো নিউজকে বলেন, গ্রাহক যাতে দ্রুত বীমা দাবির অর্থ পায় সে জন্য আমরা কাজ করছি। যদি কোনো গ্রাহক বীমা দাবির অর্থ সঠিকভাবে না পান বা বাদী অর্থ পেতে হয়রানির শিকার হন, তাহলে আমাদের কাছে অভিযোগ করলে দ্রুত পদক্ষেপ নেব।

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ঠিক কী কারণে বীমা দাবির অর্থ বকেয়া পড়ছে তা বলা কঠিন। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো দাবির অর্থ পরিশোধ করে। এ ক্ষেত্রে হয়তো প্রক্রিয়াগত কারণে কিছু সময় লাগতে পারে। তবে বীমা কোম্পানিগুলো দাবির অর্থ দেয় না, এমন তথ্য সঠিক নয়। সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো থেকে গ্রাহক দাবির অর্থ পাচ্ছেন না, এমন অভিযোগও এখন শোনা যায় না।

মেঘনা লাইফ ও কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর দাবির অর্থ পরিশোধের আগে সার্ভে নিয়োগ করে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করে। অনেক সময় সার্ভে রিপোর্ট পেতে দেরি হয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে সঠিক সার্ভে রিপোর্টও পাওয়া যায় না। মূলত সার্ভে রিপোর্টের কারণেই সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর দাবির অর্থ পরিশোধ করতে দেরি হয়। এরপরও এখন অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কোম্পানিগুলো দ্রুত বীমা দাবির অর্থ পরিশোধ করতে চেষ্টা করে।

এমএএস/এমএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।