অর্থনীতিতে বৈশাখী হাওয়া
দেশের অর্থনীতিতে লেগেছে বৈশাখী হাওয়া। প্রভাব পড়েছে নগর থেকে গ্রামীণ অঞ্চলে। আসন্ন বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরই চাঙা হয়ে ওঠে দেশের অর্থনীতি। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বৈশাখী ভাতার কারণে এবার আরও বেশি ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
রাত পোহালেই বাংলা নববর্ষ। দিনটিকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে থাকে নানা আয়োজন। সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে যোগ হয় কয়েক হাজার কোটি টাকা।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে কেনাকাটা। জমে উঠেছে বিকিকিনি। ফলে শপিংমল ও মার্কেটে ব্যাপক ভিড় দেখো গেছে।
ক্রেতাদের এ আগ্রহ আর উৎসাহকে কাজে লাগাতে কোম্পানিগুলো দিচ্ছে নানা ছাড় আর অফার। দেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ড ছাড়াও ছোটখাট দোকানগুলোতে চলছে ছাড়ের ছড়াছড়ি।
বিক্রেতারা বলছেন, ঈদ কিংবা পূজায় বিদেশি পোশাকের আধিপত্য থাকলেও বৈশাখে ক্রেতাদের দৃষ্টি থাকে দেশি পোশাকে।
সরেজমিন দেখা যায়, বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ফ্যাশন হাউজগুলো ঘুড়ি, মাটির হাড়ি কিংবা ঢোল ও একতারার মতো ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে। পাওয়া যাচ্ছে লাল-সাদা, হলুদ, কিংবা সাদা জমিনের ওপর বর্ণিল নকশার সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি ও ফতুয়াদসহ নানা পোশাক। আলাদা করে ক্রেতাদের নজর কাড়ছে তাঁতের শাড়ি।
ক্রেতারা বলেন, বৈশাখ উপলক্ষে ফ্যাশন হাউজগুলোতে নানা ডিজাইনের পোশাক এসেছে। দামও সাধ্যের মধ্যে।
ফ্যাশন হাউজের মালিকরা বলছেন, এবার বৈশাখ উপলক্ষে সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি ও পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হচ্ছে। এ জন্য পোশাকের দামও ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে বৈশাখ ঘিরে দেশে ফুলের ব্যবসাও জমজমাট। রাজধানীতে পাইকারি বাজারে দৈনিক ৪০-৫০ লাখ টাকার ফুল কেনাবেচা হয়। পহেলা বৈশাখ ঘিরে ৬০-৭০ লাখ টাকার বাড়তি ফুল বিক্রির টার্গেট করেছে ব্যবসায়ী সমিতি।
এছাড়া বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে দই-মিষ্টিসহ বেকারিজাত পণ্যের বিক্রিতেও বেশ ধুম পড়েছে। এবারও এর ব্যত্যয় হবে না। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সূত্রে জানা গেছে, বৈশাখকে কেন্দ্র করে অর্থনীতির চাকা সচল হয়। আগের কয়েকটি বছরে বৈশাখ উপলক্ষে অর্থনীতিতে অতিরিক্ত ১০-১২ হাজার কোটি টাকা যোগ হতো। এবার যোগ হবে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা।
এর ব্যাখ্যা হিসাবে সংগঠনটি বলছে, সরকারি কর্মচারীদের বেতন-বোনাস বাবদ যোগ হবে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা। এর সঙ্গে ব্যাংক-বীমাসহ অন্য সব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বৈশাখী বোনাস পেয়েছেন। এ হিসেবে আরও যোগ হবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।
বৈশাখ উপলক্ষে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় পোশাক। এবার পোশাক খাতে বিক্রির পরিমাণ হবে প্রায় ৬-৭ হাজার কোটি টাকা। ৫-৬ হাজার কোটি টাকা যোগ কবে খাবার ও অন্যান্য কেনাকাটায়। এছাড়া ভোগ্যপণ্যে লেনদেন হবে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে ভ্রমণ ও পর্যটন শিল্পেও যোগ হবে নতুন মাত্রা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক নাজনীন আহমেদ বলেন, বৈশাখে অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ বাড়ে। এর বড় অংশ শহর থেকে গ্রামে চলে যায়। ফলে পহেলা বৈশাখ এখন একটি সার্বজনীন অনুষ্ঠান।
সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বৈশাখের কারণে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বোনাসপ্রাপ্তি ও অন্যান্য কারণে কেনাকাটা বাড়ে যায়। বাড়তি এ টাকা আসায় কিছু মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বাড়ে। সামগ্রিকভাবে বৈশাখ অর্থনীতিতে নতুন করে চাঙাভাব নিয়ে আসে।
এমএ/এএইচ/এমএআর/পিআর