আড়ৎ পেরুলেই দাম দ্বিগুণ
রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারগুলোতে এখন যেসব তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে তার সিংহভাগই ওয়াইজঘাট ও বাদামতলীর আড়ৎ থেকে আসা। তবে ওয়াইজঘাট ও বাদামতলীর আড়তের সঙ্গে রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোর তরমুজের দামের মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাক। আড়ৎ থেকে তরমুজ বের হয়ে আধা কিলোমিটার পথ অতিক্রম না করতেই দাম বেড়ে হয়ে যায় দ্বিগুণ।
ওয়াইজঘাট থেকে বাংলাবাজারের দূরত্ব বড় জোর আধা কিলোমিটার। অথচ ওয়াইজঘাটে যে তরমুজ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সেই তরমুজ বাংলাবাজারের খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করছেন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। দূরত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামের পার্থক্যটা আরও বাড়ে। ওয়াইজঘাট থেকে ১৫০ টাকা দিয়ে কেনা তরমুজ উত্তরার ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায়।
মঙ্গলবার ওয়াইজঘাট ও বাদামতলী অঞ্চল ঘুরে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওয়াইজঘাট ও বাদামতলীর আড়তে তরমুজ বিক্রি হয় ১০০ পিস হিসেবে। বর্তমানে এখানকার আড়তে সব থেকে বড় আকারের তরমুজ ১০০ পিসের দাম ২০ হাজার থেকে ২১ হাজার টাকা। অর্থাৎ একটি তরমুজের দাম ২০০-২১০ টাকা। ওয়াইজঘাট ও বাদামতলীর আড়তে ২০০ টাকা পিস বিক্রি হওয়া একই আকারের তরমুজ মতিঝিলে বিক্রি হতে দেখা যায় ৫০০ টাকায়।
দামের এমন পার্থক্যের কারণ জানতে চাইলে মতিঝিলের ব্যবসায়ী মো. ফারুক হোসেন বলেন, আড়তের দামের সঙ্গে খুচরা বাজারের দাম মেলানো যাবে না। আড়ৎ থেকে তরমুজ এনে বিক্রি করার আগ পর্যন্ত আমাদের অনেক খরচ আছে।
বরিশালের রাঙাবালি উপজেলা থেকে বাদামতলীতে তরমুজ নিয়ে আসা মো. জসিম বলেন, আমি নিজের জমিতেই তরমুজ চাষ করি। সেই তরমুজ এখানে এনে বিক্রি করি। আড়তের মাধ্যমে তরমুজ বিক্রি করে যে অর্থ পাই তার ৫ শতাংশ আড়ৎ মালিককে দিতে হয়। আর যারা দাদন (ঋণ) নিয়ে চাষ করে তাদের কাছ থেকে আড়ৎ মালিক কমিশন নেয় ১০ শতাংশ।
তিনি বলেন, আমি ১ হাজার ৬০০ তরমুজ নিয়ে এসেছি। এক’শ তরমুজ ৭ হাজার ৫০০ থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। অর্থাৎ একটি তরমুজের দাম ৭৫-৮০ টাকা পাওয়া যাবে। এই তরমুজই রাজধানীর বাজারে ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
রাঙাবালি থেকে ওয়াইজঘাটের আড়তে নিয়মিত তরমুজ নিয়ে আসা ব্যবসায়ী মাহফুজুর রহমান বলেন, এখন আড়তে সব থেকে বড় যে তরমুজ আছে তার দাম ২৫০ টাকার মধ্যে। ২৫০ টাকার ওপরে এখানে কোন তরমুজ নেই। তবে আড়ৎ থেকে এক পিস, দুই পিস তরমুজ বিক্রি হয় না। একজন ক্রেতাকে কমপক্ষে ৫০ পিস তরমুজ কিনতে হবে।
বাদামতলীতে তরমুজ কিনতে আসা উত্তরার ব্যবসায়ী মো. কামাল হোসেন বলেন, আমি ১০০ পিস তরমুজ কিনেছি ৭ হাজার ৫০০ টাকায়। এর মধ্যে বিভিন্ন আকারের তরমুজ আছে। কিছু তরমুজ ৩৫০ টাকা পিস বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। তবে বেশির ভাগ তরমুজের পিস ৩০০ টাকার নিচে বিক্রি করতে হবে।
৭৫ টাকার তরমুজ খুচরা বাজারে ৩৫০ টাকা হওয়ার কারণ কি জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, আড়ৎ থেকে তরমুজ কেনার পর আড়ৎ মালিককে শতকরা ১০ টাকা কমিশন দিতে হয়েছে। এখন এই মাল পিকাপে করে উত্তরায় নিতে ভাড়া দিতে হবে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এর সঙ্গে আরও কিছু খরচ আছে। আবার আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরও খরচ আছে। তাই দামের এমন ব্যবধান। দামের ব্যবধান অনেক মনে হলেও আসলে আমাদের লাভ খুব বেশি হয় না।
এমএএস/ওআর/আরএস/পিআর