রড-সিমেন্টের মূল্যবৃদ্ধি : সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা শেষ
হঠাৎ করে রড, সিমেন্টসহ নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। রোববার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সবপক্ষের কথা শোনেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তবে সভায় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভাব হয়নি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ৬ থেকে ১০ এপ্রিলের মধ্যে ব্যবসায়ীদের নিয়ে অর্থমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সঙ্গে বসবেন বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন, বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনোয়ার হোসেন, সিমেন্ট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা কামালসহ অবকাঠামো নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসায়ী।
ব্যবসায়ীদের বক্তব্য শোনার পর তোফায়েল আহমেদ বলেন, রডের দাম বাড়ার সঙ্গে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক, বন্দরে জাহাজ আনলোড না হওয়া, পরিবহনে খরচ বেশি হওয়া এসব বিষয় জড়িত। তাই এসব সমস্যা সমাধানে আগামী ৬ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিলের মধ্যে অর্থমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক কররা হবে। ওই বৈঠকে ব্যবসায়ীরাও থাকবেন।
তিনি বলেন, যেখানেই আমি যাই সবার ধারণা রড-সিমেন্টের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। নির্বাচনের বছরে এ কারণে আমাদের উন্নয়নমূলক কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমার নির্বাচনী এলাকাতেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ রয়েছে। তবে এটাওতো স্বাভাবিক যারা রড-সিমেন্ট উৎপাদন করে তারাওতো লস করবে না।
সরকারি বাণিজ্য সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক মাস আগে ৬০ গ্রেডের রডের বাজারমূল্য ছিল ৫৯ থেকে ৬০ হাজার টাকা এবং ৪০ গ্রেডের রডের বাজারমূল্য ৫০ থেকে ৫১ হাজার টাকা। এখন ৬০ গ্রেডের রডের বাজারমূল্য ৬৯ থেকে ৭২ হাজার টাকা। আর ৪০ গ্রেডের দাম ৫৭ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা।
তবে বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনোয়ার হোসেন জানান, আজ বাংলাদেশের বাজারে রডের দাম প্রতিটন ৬৮ হাজার টাকা।
শুধু রডের মূল্য নয় নির্মাণশিল্পের অপরিহার্য পণ্য সিমেন্ট ও ইটের দামও বেড়েছে। কোম্পানি ভেদে সিমেন্টের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি প্রায় ১০০ টাকা এবং ইটের বেড়েছে প্রতি হাজারে এক হাজার টাকা। ৩৬০ থেকে ৩৯০ টাকার সিমেন্টের বস্তা এখন ৪৭০ থেকে ৫১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সভায় মনোয়ার হোসেন বলেন, রড তৈরির কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিসহ কিছু আন্তর্জাতিক ও দেশীয় কারণে সম্প্রতি প্রতি টন রডের উৎপাদন খরচ বেড়েছে ১৮ হাজার ৪১৯ টাকা। তাই তারা রডের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের কাঁচামাল আমাদানির জাহাজকে যদি বন্দরে সমস্যায় না রাখে, আর সড়ক পথে পরিবহনে যদি এক ট্রাকে ১৩ টনের বেশি পরিবহন করা যাবে না এই বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়া হয়, তাহলে আমরা এ মুহূর্তেই টনপ্রতি ৪ হাজার টাকা করে রডের দাম কমাতে পারব।’
মোস্তফা কামাল বলেন, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিসহ বেশকিছু কারণে প্রতিটন সিমেন্ট উৎপাদনে ব্যয় বেড়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকা। এর বিপরীতে তারা প্রতিটনে দাম বাড়িয়েছেন ১ হাজর টাকা।
রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, যেভাবে রড ও সিমেন্টের দাম বেড়েছে তাতে করে নির্মাণ শিল্পে ধস দেখা দিয়েছে। এখনো সরকারের মেগা প্রজেক্টগুলো পুরোপুরি চালু হয়নি। তাই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যদি মেগা প্রকল্পগুলো পুরোদমে চালু হয় তখন দেশে টাকা থাকলে সোনা পাওয়া যাবে কিন্তু রড-সিমেন্ট পাওয়া যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাই তিনি এখনই এ বিষয়ে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আনুরোধ জানান।
এমইউএইচ/জেডএ/পিআর/জেআইএম