সঞ্চয়পত্র : লক্ষ্যের চেয়ে বেশি ঋণ ৮ মাসেই

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৪৭ এএম, ০১ এপ্রিল ২০১৮

ব্যাংক আমানতের সুদের চেয়ে এখনো দ্বিগুণ বেশি মুনাফা মিলছে সঞ্চয়পত্রে। অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শেয়ারবাজারে চলছে মন্দাভাব। তাই সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার চলতি অর্থবছরে যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য ধরেছিল, তা ছাড়িয়েছে আট মাসেই।

জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতরের সর্বশেষ হাল নাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সরকার চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১২ মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়েই ৩৩ হাজার ১১৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বেশি বিক্রি হয়েছে।

অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে মোট বিনিয়োগ এসেছে ৫৩ হাজার ৮৩১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মূল্য ও মুনাফা পরিশোধে সরকারের ব্যয় হয়েছে ২০ হাজার ৭১১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে কেবল মুনাফা পরিশোধেই ব্যয় হয়েছে ১৩ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। মূল্য ও মুনাফা বাদ দিয়ে এ খাত থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ১১৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। যা গোটা অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ১০৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

সঞ্চয়পত্রে বিক্রি বাড়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, দেশের শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কম। অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যও তেমন ভালো যাচ্ছে না। একই সঙ্গে চলছে বিনিয়োগ মন্দা। অন্যদিকে ব্যাংক আমানতের সুদের চেয়ে এখনো দ্বিগুণ বেশি মুনাফা মিলছে সঞ্চয়পত্রে। সব মিলিয়েই নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা।

তবে সঞ্চয়পত্রের এ ঋণের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করার পরামর্শ দিয়েছেন এ অর্থনীতি বিশ্লেষক। তা নাহলে এ ঋণ বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করতে হবে।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে মোট বিনিয়োগ আসে ছয় হাজার ৬০২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয় স্কিমগুলোর মূল্য ও মুনাফা পরিশোধে সরকারের ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ৪৪৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। ফলে নিট ঋণ দাঁড়ায় চার হাজার ১৫৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

এর আগের মাস জানুয়ারিতে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে নিট ঋণ হয়েছিলো পাঁচ হাজার ১৩৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

প্রসঙ্গত: জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা প্রদান করে সরকার। মেয়াদপূর্তির পরে বিনিয়োগকৃত অর্থও ফেরত দেয়া হয়। প্রতিমাসে বিক্রি হওয়া সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে প্রাপ্ত বিনিয়োগের হিসাব থেকে আগে বিক্রি হওয়া স্কিমগুলোর মূল্য ও মুনাফা বাদ দিয়ে নিট ঋণ হিসাব করা হয়। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেটে নির্ধারিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

অধিদফতরের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রগুলোর মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বর্তমানে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।

এসআই/এএইচ/এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।