ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ ৮ ব্যাংক

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৫৮ পিএম, ১৮ মার্চ ২০১৮

ব্যাংকিং খাতে বেড়েছে খেলাপি ঋণের পরিমান। এর প্রভার পেড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণেও। এই প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে সরকারি-বেসরকারি খাতের আটটি ব্যাংক। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বশেষ হিসাবে আট ব্যাংকে ৯ হাজার ৩৭৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকার প্রভিশন ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

খেলাপি ঋণের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি করা ডিসেম্বর-১৭ প্রান্তিকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

ব্যাংক ব্যবস্থার ঋণের শ্রেণিমান অনুযায়ী, নির্ধারিত পরিমাণ নিরাপত্তা সঞ্চিতির অর্থ সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংক। বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও স্টান্ডার্ড ব্যাংক। এছাড়া নতুন করে এই ঘাটতির তালিকায় যুক্ত হয়েছে বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। এসব ব্যাংকের মোট ঘাটতির সিংহভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংকের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণেই ব্যংকিং খাতে বাড়ছে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ। আর এ সময়ে যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বর-১৬ শেষে ছিল ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ১৩১ কোটি টাকা।

একই সময়ে ওই আট ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৩৭৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সব চেয়ে ঘাটতি বেশি সোনালী ব্যাংকের। ডিসেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৮৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এরপরই বেসিক ব্যাংকের ঘাটতির পরিমান তিন হাজার ৪৯৫ কোটি ২ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের এক হাজার ৮০ কোটি ৯০ লাখ, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ১৯৫ কোটি ৪৩ লাখ, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৫৯ কোটি ৫৩ লাখ, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৭৮ কোটি ৭৮ লাখ, স্টান্ডার্ড ব্যাংকের ২৭৫ কোটি ২০ লাখ এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ১৩৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৪৪ হাজার ২৯৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ৫৭টি ব্যাংক সংরক্ষণ করে ৩৭ হাজার ৫২৮ কোটি ৬ লাখ টাকা। অনেক ব্যাংক নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি প্রভিশন সংরক্ষণ করেছে। ফলে সার্বিকভাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ড. গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যাচাই-বাছাই না করেই ব্যাংকগুলো ঋণ দিচ্ছে। অন্যদিকে বিশেষ সুবিধায় নিয়মিত ঋণগুলো ঠিকমতো আদায় হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। আর নিয়ম অনুযায়ী খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন রাখতে হয়। আর এটি রাখতে ব্যর্থ হলে মূলধন ঘাটতিতে পড়ে ব্যাংক।

তিনি বলেন, প্রভিশন ঘাটতি বাড়ছে। আর এটি বেশি বাড়ছে সরকারি ব্যাংকগুলোতে। এর মূল কারণ তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি কম। তাই এসব ব্যাংকগুলোকে সার্পোট না দিয়ে ঋণ আদায়ের ওপর চাপ দেয়া উচিত। একইসঙ্গে নতুন ঋণ বিতরণে কঠোরতা প্রয়োজন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলো প্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনো প্রকার ঝুঁকির মুখে না পড়ে সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ।

নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। খেলাপি ঋণ বাড়লে, আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে শেয়ারহোল্ডাদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না সংশ্লিষ্ট ব্যাংক।

এসআই/জেডএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।