জীবন বীমার সিংহভাগ দাবি অপরিশোধিত

সাঈদ শিপন
সাঈদ শিপন সাঈদ শিপন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:২৩ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

উত্থাপিত বীমা দাবির সিংহভাগই পরিশোধ করছে না দেশে ব্যবসা করা জীবন বীমা কোম্পানিগুলো। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিগুলোর তৈরি করা প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বর্তমানে দেশে ব্যবসা করছে ৩২টি জীবন বীমা কোম্পানি। এর মধ্যে ২৮টি কোম্পানির বীমা দাবি উত্থাপন ও পরিশোধ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেছে। ডিসেম্বর মাসে এ কোম্পানিগুলোতে প্রক্রিয়াধীন থাকা ৬৭ শতাংশ বীমা দাবি পরিশোধ হয়নি।

শুধু ডিসেম্বর নয়, মাসের পর মাস ধরে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোতে দাবি পরিশোধের ক্ষেত্রে এমন চিত্র বিরাজ করছে। নভেম্বর মাসে অপরিশোধিত দাবির হার ছিল ৭১ শতাংশ। আগের মাস অক্টোবরে এ হার ছিল ৭০ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে ৭৩ শতাংশ। এভাবে প্রতি মাসে প্রায় ৭০ শতাংশ বীমা দাবি অপরিশোধিত থেকে যাচ্ছে জীবন বীমা খাতে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বীমা দাবি উত্থাপনের পরও ডিসেম্বর মাস শেষে দাবির অর্থ পাননি এমন গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৮০ হাজার ৯৯৪ জনে। মাসটিতে বিভিন্ন কোম্পানিতে প্রক্রিয়াধীন বীমা দাবির সংখ্যা ছিল চার লাখ ১৬ হাজর ৮১০টি। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসে বীমা দাবির অর্থ পেতে আবেদন করেন এক লাখ ৬৫ হাজার ৮৪১ জন। বাকি দুই লাখ ৫০ হাজার ৯৬৯ জন গ্রাহক ডিসেম্বর মাসের আগেই আবেদন করেন। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসে দাবির অর্থ পেয়েছেন এক লাখ ৩৫ হাজার ৭৫৫ জন।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সব থেকে বেশি বীমা দাবি অপরিশোধিত রয়েছে ডেল্টা লাইফে। দেশের বৃহৎ এ জীবন বীমা কোম্পানিটিতে ডিসেম্বর শেষে অপরিশোধিত বীমা দাবির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৭ হাজার ৬৭২টি। মাসটিতে ডেল্টা লাইফ ১১ হাজার ২৪৫ গ্রাহকের দাবির অর্থ পরিশোধ করেছে। তবে এ সময় কোম্পানিটিতে প্রক্রিয়াধীন দাবির সংখ্যা ছিল এক লাখ আট হাজার ৯২২টি। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসে নতুন উত্থাপিত দাবির সংখ্যা ২৪ হাজার ৭৮৭টি। বাকি ৮৪ হাজার ১৩৫টি দাবি ডিসেম্বর মাসের আগেই উত্থাপিত হয়।

দ্বিতীয় স্থানে থাকা গোল্ডেন লাইফে অপরিশোধিত বীমা দাবির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ১৭টি। মাসটিতে কোম্পানিটি বীমা দাবি পরিশোধ করে এক হাজর ৫৯১ গ্রাহকের। তবে দাবির অর্থ চেয়ে আবেদন করা গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ৪৬ হাজার ৬০৮ জন। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসে নতুন আবেদন করেন এক হাজার ৭২৪ জন। বাকি ৪৪ হাজার ৮৮৪ গ্রাহক ডিসেম্বর মাসের আগেই দাবির অর্থ চেয়ে কোম্পানিটিতে আবেদন করেন।

তৃতীয় স্থানে রয়েছে দেশে ব্যবসা করা একমাত্র বিদেশি কোম্পানি মেটলাইফ। কোম্পানিটি ২১ হাজার ৬৮৩ গ্রাহকের দাবির অর্থ পরিশোধ করেনি। ডিসেম্বর মাসে কোম্পানিটি বীমা দাবির অর্থ দিয়েছে তিন হাজার ৬৮৪ জনকে। অথচ দাবির অর্থ পেতে আবেদন করা গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ৩৬৭ জন। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসে আবেদন করেন চার হাজার ৩৯৫ জন এবং বাকি ২০ হাজার ৯৭২ গ্রাহক ডিসেম্বর মাসের আগেই বীমা দাবির অর্থ চেয়ে আবেদন করেন।

কোম্পানির নাম

নভেম্বর মাসে অপরিশোধিত বীমা দাবি

ডিসেম্বর মাসে উত্থাপিত নতুন বীমা দাবি

মোট উত্থাপিত বীমা দাবি

পরিশোধ করা বীমা দাবির সংখ্যা

অপরিশোধিত বীমা দাবির সংখ্যা

জীবন বীমা কর্পোরেশন

১০,৬৫৮

৬,৯৬৫

১৭,৬২৩

৫,৩৪৭

১২,২১৭

আলফা ইসলামী লাইফ

বেস্ট লাইফ

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ

৭,৮৪৭

১২,২৪২

২০,০৮৯

৫,৫৪৬

১৪,৫৪৩

গার্ডিয়ান লাইফ

১,০৫২

২,৬৯৬

৩,৭৪৮

৩,১৬৪

৫৮৪

হোমল্যান্ড লাইফ

১২,০৫৩

৪,৫২৪

১৬,৫৭৭

১১,২৪৭

৫,৩৩০

যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স

১১

১৩

১১

মেঘনা লাইফ

৫৪৭

৯৫

৬৪২

২০১

৪৪১

মার্কেন্টাইল লাইফ

ন্যাশনাল লাইফ

৯৫৭৯

৪৪৮৯৪

৫৪৪৭৩

৩৩২৮২

২১,১৯১

এনআরবি গ্লোবাল লাইফ

২১

২৪

২২

পদ্মা ইসলামী লাইফ

১৩,৭৬৪

২,১৫৭

১৫,৯২১

৩,৮২৬

১২,০৯৫

প্রগতি লাইফ

১৮৪

৩২

২১৬

২৯

১৮৭

পপুলার লাইফ

৫১৬

৪০,৫১০

৪১,০২৬

৪০,৬৩৪

৩৯২

প্রাইম ইসলামী লাইফ

৯,২৮৫

১,৮৪২

১১,১২৭

২,৩৭৭

৮,৭৫০

প্রোটেক্টিভ লাইফ

২১

১৯১

২১২

২০০

১২

রূপালী লাইফ

২,২৪১

১,৭১৯

৩,৯৬০

২,৪৩৩

১,৫২৭

সন্ধানী লাইফ

৭,৭৪৪

৭,৯৭১

১৫,৭১৫

৬,০৮৮

৯,৬২৭

স্বদেশ লাইফ

সোনালী লাইফ

সানফ্লাওয়ার লাইফ

২৪,৫২৩

৫,৫৫৩

৩০,০৭৬

১,৯১৬

২৮,১৬০

সানলাইফ লাইফ

৮৯৪

৩,৫২০

৪,৪১৪

২,৯১৬

১,৪৯৮

ট্রাস্ট লাইফ

জেনিথ ইসলামী লাইফ

১৯

২০

১৮

বড় অঙ্কের বীমা দাবি অপরিশোধিত থাকার বিষয়ে গোল্ডেন লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, এখন ইনভেস্টমেন্ট রিটার্ন অনেক কমে গেছে, বীমা দাবি অপরিশোধিত থাকার পেছনে এটি একটি বড় কারণ। পাশাপাশি বীমা পলিসিতে থাকা গ্রাহকের নাম ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সঙ্গে না মেলায় দাবি পরিশোধে সমস্যা হয়।

তিনি বলেন, গ্রাহক যখন বীমা করেছে তখন ন্যাশনাল আইডি কার্ড ছিল না। পরবর্তীতে ন্যাশনাল আইডি কার্ড এসেছে। কোনো দাবি উত্থাপিত হলে আমরা গ্রাহকের কাছে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি চাই। কিন্তু গ্রাহকের জমা দেয়া ন্যাশনাল আইডি কার্ডে থাকা নামের সঙ্গে বীমা পলিসির নামের মিল থাকে না, ফলে দাবি পরিশোধে সমস্যা হয়। তবে কেউ এফিডেভিট করে দিলে আমরা দাবির অর্থ পরিশোধ করে দেই।

বড় দাবি অপরিশোধিত থাকার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মেটলাইফের রিজিওনাল সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নুরুল ইসলাম। একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বার বার ব্যস্ততা দেখিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন।

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সাবেক সহ-সভাপতি ও সন্ধানী লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, আমরা গ্রাহকের দাবি দ্রুত পরিশোধের চেষ্টা করি। বীমা দাবি অপরিশোধিত থাকার পেছনে গ্রাহকের অসচেতনতাও এক ধরনের দায়। সঠিকভাবে দাবির অর্থ পেতে আবেদন করলে, নাম ভুল না হলে, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলে গ্রাহকের দাবির অর্থ পেতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

এমএএস/এসএইচএস/এমএআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।