মে মাসের মধ্যেই আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৪১ পিএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রিজার্ভ চুরির বিষয়ে আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে অর্থপাচার মামলা করার প্রস্তুতি কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে রিজার্ভ চুরি-সংক্রান্ত মামলা পরিচালনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগকৃত আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি এ কথা জানান।

এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পরামর্শক দেবপ্রসাব দেবনাথ, মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আজমালুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রথম থেকেই অবস্থান ছিলো যে আরসিবিসিই মানি লন্ডারিং করেছে। একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জ্ঞানই করপোরেট জ্ঞান। ৫ ফেব্রুয়ারি (২০১৬) ২৭-২৮টি লেনদেন একদিনেই হয়েছে, যেদিন টাকাটা ওখান গিয়ে পৌঁছায়। এতোবড় অংকের অর্থের লেনদেন সাধারণত সন্দেহজনক হিসেবে রিপোর্ট ও ফ্রিজ (জব্দ) করে রাখতে হয়। সে মোতাবেক আরসিবিসি প্রথম দিন টাকাটা ফ্রিজও করে দিয়েছিল। কিন্তু পরে ১ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে তা বিতরণ করে। এ থেকে পরিস্কার ব্যাংকটির ছোটবড় অনেক কর্মকর্তাই এর সঙ্গে জড়িত; মানি লন্ডারিং ওরাই করেছে। সুতরাং আরসিবির বিরুদ্ধে একটি সিভিল মামলা তো করতেই পারি।’

আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে নিউইয়র্কের আদালতে মামলা করার সংকল্প ব্যক্ত করে আজমালুল কিউসি বলেন, ‘আমরা ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক ও সুইফটকে প্রস্তাব দিয়েছি। ওরা রাজি থাকলে আমরা তিন প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারি। আর ওরা রাজি না হলে আমরা আরসিবিসিকে বিবাদী করে একাই মামলা করবো। এর মধ্যে আরসিবিসি কোনো প্রস্তাব দেয় কি-না আমরা সে অপেক্ষায় আছি’।

তিনি বলেন, ‘আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করছিলাম। তবে যেহেতু মামলা করার সময় পার হয়ে যাচ্ছে তাই এর আগেই আমাদের এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। নিউইয়র্কের আদালতের নিয়ম অনুযায়ী কোনো ঘটনার তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হয়। আমাদের রির্জাভ চুরির ঘটনা দুই বছর পার হয়েছে।’

রিজার্ভ চুরির বিষয়ে সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে গ্রহণযোগ্য দলিল (এডমিসাবল এভিডেন্স) নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন কিছু এডমিসাবল এভিডেন্স এসেছে, তা নিয়েই আমরা মামলা করব।’

এক প্রশ্নের জবাবে ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, আরসিবিসির বিরুদ্ধে স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি আইনে মামলা নিস্পত্তি করতে ঠিক কত সময় লাগবে তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। এর আগে একই আইনে একটি ছোট মামলা শেষ করতে আমাদের সর্বনিম্ন সাড়ে তিন বছর লেগেছিল।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সুইফট সিস্টেমে ভুয়া পরিশোধ অর্ডার পাঠিয়ে নিউইয়র্ক ফেডে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হিসাব থেকে চুরি করা প্রায় ১০ কোটি ডলারের মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের একটি শাখা থেকে জুয়ার আসর হয়ে বাইরে চলে যায়। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৪৬ লাখ ডলার উদ্ধার হয়েছে। বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ অনাদায়ী রয়েছে; যা আরসিবিসির কাছ থেকে আইনি প্রক্রিয়ায় উদ্ধারের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এসআই/এমএমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।