৮২২ কোটি টাকার কর ফাঁকি : প্রিমিয়ার ব্যাংককে নোটিশ

মামুন আব্দুল্লাহ মামুন আব্দুল্লাহ
প্রকাশিত: ১১:২৩ পিএম, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও শূন্য হারের সেবা বিক্রি সংক্রান্ত নথিপত্রে অনিয়ম করে ৮২২ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রিমিয়ার ব্যাংক। অনিয়মের এ কারণ জানতে ব্যাংকটিকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

এনবিআর কমিশনার মতিউর রহমান স্বাক্ষরিত নোটিশটি প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর সোমবার ইস্যু করা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, ‘প্রিমিয়ার ব্যাংকটি গত পাঁচ বছরে পাঁচ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকার ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত সেবা দেয়ার কথা বললেও তার সপক্ষে প্রয়োজনীয় নথিপত্র কিংবা প্রমাণ দেখাতে পারেনি। ওই টাকার ওপর ১৫ শতাংশ হিসাবে ৮২২ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দেয়া হয়েছে।’

এতে বলা হয়, ‘প্রিমিয়ার ব্যাংক কর্তৃক দলিলপত্রে প্রদর্শিত অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও শূন্য হারের সেবা বিক্রির মাধ্যমে প্রদেয় মূসক পরিশোধ করেনি। যা মূল্য সংযোজন আইন ১৯৯১ এর ধারা ৩, ধারা ৪, ধারা (৫), ধারা (৬) এবং ধারা ৩১ ও মূল্য সংযোজন কর বিধিমালা ১৯৯১ এর বিধি ২৩ এর লঙ্ঘন।’

‘এমতাবস্থায় মূল্য সংযোজন কর আইন- ১৯৯১ ধারা ৫৫ এর উপধারা ১ অনুসারে প্রতিষ্ঠানের (প্রিমিয়ার ব্যাংক) নিকট অপরিশোধিত মূসক ৮২২ কোটি ৫২ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯৫ টাকা দাবি করা হলো।’ দাবিকৃত টাকা কেন আদায় করা হবে না তার কারণ সংবলিত জবাব নোটিশ জারির ১৫ দিনের মধ্যে দাখিল করার কথা বলা হয়েছে।

এর আগে, এনবিআরের তদন্তে দেখা গেছে, ব্যাংকটি ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও শূন্য হারের সেবা বিক্রি করছে বলে দাখিলপত্রে (ভ্যাট রিটার্ন) উল্লেখ করেছে। কিন্তু এর সপক্ষে কোনো দলিলপত্র জমা দেয়নি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনস্থ বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-ভ্যাট) সূত্র জানায়, এর আগে এলটিইউ-ভ্যাট থেকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সেবা ও পণ্য বিক্রির সপক্ষে দলিলপত্র জমা দিতে নোটিশ দেয়া হয়। এরও আগে দুই দফা নোটিশ দেয়া হয়। প্রথম দফার নোটিশের পর উচ্চ আদালতে রিট (৩৪৯/২০১৮) করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এলটিইউ-ভ্যাট থেকে আপিল বিভাগে সিএমপি দাখিল (৫১/২০১৮) করলে আদালত রিটটি অকার্যকর (ভেকেট) করেন। এরপর দ্বিতীয় নোটিশ করা হয়।

প্রিমিয়ার ব্যাংকের দাখিলপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত সেবা বিক্রির তথ্য দিলেও এর সপক্ষে দীর্ঘদিন ধরে কাগজপত্র জমা দেয়নি। কাগজপত্র জমা দিতে গত বছরের ৭ ও ২৬ ডিসেম্বর নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ আদালতে রিট করেন। পরে আপিল বিভাগ থেকে সিএমপি দাখিল করে রিট ভেকেট করা হয়। রিট ভেকেটের (স্থিতাবস্থা অকার্যকর) পর সেবা বিক্রির সপক্ষে কাজগপত্র জমা দিতে প্রিমিয়ার ব্যাংককে তিন কর্মদিবস সময় দেয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে দলিলপত্র জমা দিতে না পারলে আইন অনুযায়ী ভ্যাট ফাঁকির প্রাথমিক দাবিনামা জারি করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বর্তমানে ২৬টি সেবা ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হিমাগার, সংবাদপত্রে প্রকাশিত মৃত্যু সংবাদ (এর বাইরে সব বিজ্ঞাপনের ওপর ভ্যাট আছে), ছাপাখানা (বই, সাময়িকী), ইন্টারনেট বিল (শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য), ভূমি বিক্রয়কারী, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, স্টক ও সিকিউরিটি, ট্যুর অপারেটর, মেডিটেশন সেবা ও অনলাইনে পণ্য বিক্রি। এর বাইরে সব সেবার ওপর ভ্যাট আরোপিত আছে। এছাড়া রফতানি খাতসংশ্লিষ্ট সেবা ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত (শূন্য হার)।

নোটিশ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দাখিলপত্রে ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও শূন্য হারের সেবা বিক্রি করছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। এর মধ্যে ২০১৩ সালে ৯৯৮ কোটি টাকা, ২০১৪ সালে এক হাজার ৫১ কোটি টাকা, ২০১৫ সালে পাঁচ হাজার ২৯ কোটি টাকা, ২০১৬ সালে এক হাজার ২২০ কোটি টাকা এবং ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এক হাজার ২৪১ কোটি টাকার অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য ও সেবা এবং শূন্য হারের পণ্য ও সেবা বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এমএ/এমএআর/এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।