শেয়ারবাজারে দরপতন অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:১৪ পিএম, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি দেশের শেয়ারবাজার। বৃহস্পতিবার টানা তিন কার্যদিবস দরপতন হয়েছে। নানা গুঞ্জনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দেয়ায় এমন দরপতন ঘটছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতি, ঋণ আমানতের অনুপাত (এডিআর) কমানো এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় নিয়ে শেয়ারবাজারে গুঞ্জন চলছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি শ্রেণি ইচ্ছাকৃতভাবেই গুঞ্জন ছড়াচ্ছে। এর মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে চক্রটি কম দামে শেয়ার কিনছে।

নানা গুঞ্জনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়ায় বুধবার শেয়ারবাজারে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন ঘটেছে। ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক পড়ে যায় ৮৮ পয়েন্ট। পরিস্থিতির ভয়াবহতা আচ করতে পেরে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) এবং ডিএসই’র ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)।

যৌথ সংবাদ সম্মেলন ডেকে দুই সংগঠনের নেতারা বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভিত্তিহীন গুজব ছড়ানো হচ্ছে। বাজারে যেসব গুজব রয়েছে তার কোনটাই সত্য নয়।

শেয়ারবাজারে সংকট সৃষ্টি হওয়ার মতো কিছুই ঘটেনি। বরং সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব পক্ষই চায় এ বছর শেয়ারবাজার চাঙা থাকুক।

বিএমবিএ ও ডিবিএ নেতারা এমন কথা বললেও বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্য সূচকের পতন হয়েছে।

মূল্য সূচকের পতনের পাশাপাশি উভয় বাজারে লেনদেন হওয়ার বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমেছে। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৩৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫১টির। আর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৮টির। বাজারে লেনদেন হয়েছে ৩২৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪৭২ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৮ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দু’টি মূল্য সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২২৭ পয়েন্টে অবস্থা করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৯৭ পয়েন্টে।

ডিবিএ সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সবাই এ বছরটা শেয়ারবাজার চাঙা দেখতে চায়। এখন বিদেশি বিনিয়োগ সর্বোকালের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। পুঁজিবাজারে কোনো ধরনের সংকট নেই। এ সংকট কৃত্রিম এবং একটি ‘সার্টেন পয়েন্ট’ থেকে ছড়ানো হচ্ছে। শুধুমাত্র গুজবের ওপর বাজার পড়ে যাচ্ছে।

বাজারে কি ধরনের গুজব রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুজবটা সাধারণ মানুষ থেকে সবাই জানে। গুজবটা অনেকটাই রাজনৈতিক।

বিএমবিএ’র মহাসচিব খায়রুল বাশার বলেন, সামনে দেশে কি যেন একটা হতে যাচ্ছে এমন একটি গুজব বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কগ্রস্থ করে ফেলেছে। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা, ৮ ফেব্রুয়ারি চলে গেলেই আপনারা বুঝতে পারবেন। আসলে কিছুই হয়নি।

বৃহস্পতিবার টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে গ্রামীণ ফোনের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৯ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা মুন্নু সিরামিকের ১৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স।

লেনদেনে এরপর রয়েছে- আফিল ইন্ডাস্ট্রিজ, স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যাল, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, বিডি ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল টিউবস এবং ফার্মা এইড।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএসসিএক্স ৪২ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ২৪৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেন হয়েছে ১২০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

লেনদেন হওয়া ২৩২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৬টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৪টির। আর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টির।

এমএএস/এএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।